আমার নির্ভীক মা

গত রোববার ছিল মা দিবস। দিনটি উপলক্ষে মায়ের সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি ও ভালো লাগার ঘটনা নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য লেখা পাঠিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা। বাছাইকৃত লেখা নিয়ে আজকের আয়োজন।

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

আম্মু একবার আমাকে আর ছোট বোনকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। যাত্রাপথে গোয়ালন্দ ঘাট থেকে লঞ্চে উঠতে হবে। ভিড়ের মধ্যে ছোট বোন সবার আগে লঞ্চে উঠে পড়ে। পরমুহূর্তেই লঞ্চ ছেড়ে দেয়। আমরা আর উঠতে পারিনি।

ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে লঞ্চ ছেড়ে কিছুটা এগিয়েও গেছে। মা পাড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকলেন, ‘আমার বাচ্চা দিয়ে যান, আমার বাচ্চা দিয়ে যান।’ চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষ বলতে লাগল, ‘সব লঞ্চ ওপাড়ে গিয়ে থামবে। ওখান থেকে নিয়ে নেবেন। পরের লঞ্চে আসুন।’

মায়ের সঙ্গে লেখক ও তাঁর বোন
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

কে শোনে কার কথা! একটার পর একটা লঞ্চ গায়ে গায়ে ভিড়িয়ে রাখা। নিমেষে দেখলাম আম্মু পাশের লঞ্চের ধার বেয়ে বেয়ে চলতে শুরু করেছেন। সবার চক্ষু চড়কগাছ। আমার মা হাত বাড়িয়ে দিলেন। তখনো বোনের লঞ্চটা আম্মুর লঞ্চের গায়ে লেগে রয়েছে। আমার মা কোলে করে মেয়েকে নামালেন নিজের লঞ্চে। রীতিমতো যেন কোনো অ্যাকশন মুভির দৃশ্য।

মা-বাবা আলাদা হয়েছিলেন যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি, ছোট বোন তখন ক্লাস ওয়ান বা টু-তে পড়ে।

বর্তমানে আমার স্নাতক প্রায় শেষ। আর বোনের শুরু। এখনো আমার নির্ভীক মা আমাদের সেভাবেই আগলে রেখেছেন।

শিক্ষার্থী, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত