দুরন্ত একটি মেয়ে। যার ছোট ছোট হাতের স্পর্শ আর আধো আধো মা ডাকে তুমি হয়েছ পূর্ণ। ছোট্ট সেই মেয়েটি খিলখিল হাসিতে মাতিয়ে রাখে পরিবারের সবাইকে। মায়ের আদুরে মেয়েটার নানা রকম আবদারে অনুষঙ্গ যোগ করে বাস্তবে তা পূরণ করে থাকেন মা। এমনকি, সেই সন্তানের অভিযোগ ও অভিমান ভাঙাতে মা নিজেকে সাজায় ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে। বলছি, আমার মায়ের কথা।
মাকে সব ধর্মেই উচ্চাসীন করা হয়েছে। মায়ের স্পর্শেই দিনকে দিন একটি সন্তান পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে ওঠে। দিনের শুরু থেকে শেষ ভাগে যে মানুষটা আমার গল্প ও বাস্তবতার জগতে মিশে থাকেন, তিনি মা। প্রতিটি সন্তানের গল্প, উপন্যাস কিংবা কাব্যে যিনি প্রধান চরিত্রে থাকেন তিনি মা।
মা তুমি তো আমার সেরা মা। আমি হেরে যেতে যেতেও তোমার পরামর্শে জিতে গেছি।
মায়ের শরীরে এক অদ্ভুত ঘ্রাণ রয়েছে। যে ঘ্রাণ অন্য কারও মায়ের শরীরে মেলে না। নতুন পোশাকে সন্তানকে সাজালেও মা কিংবা বাবারা কোনোদিন রংবেরঙের পোশাকে নিজেদের সাজায় না। মা মানে হাজারো ত্যাগ, তিতিক্ষা। যার সীমারেখা নেই নির্দিষ্ট।
মা, শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন—প্রতিটি সময় তুমি আমার সঙ্গে একদম ঘড়ির কাঁটার মতো লেগে থাকো। আমাকে পিছু হটতে দাওনি কখনো। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় দায়িত্ব ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক পড়া অবস্থায় কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হয়। কত শত জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। কিন্তু মা তুমি তো আমার সেরা মা। আমি হেরে যেতে যেতেও তোমার পরামর্শে জিতে গেছি। দিনের প্রথম ভাগ থেকে শুরু করে রাতের শেষ ভাগেও তুমি আমার চিন্তায় দিকহারা হয়ে থাকো।
রোগ, শোক, তাপ—কোনোকিছুই যেন কোনো মাকে স্পর্শ করে না। মায়ের কষ্টগুলো আজীবন লুকানো থাকে। মায়েরা তাঁদের দুঃখগুলো কখনো কাউকে জানতে দেয় না। আমার মা সংগ্রামী; যিনি সংসার সমরাঙ্গে নিজেকে বিশেষ ভূমিকায় অধিষ্ঠিত করেছেন। সার্টিফিকেটধারী উচ্চ ডিগ্রিসম্পন্ন নয় আমার মা, তবে তিনি স্বশিক্ষিত। যিনি জীবনবোধ, মনুষ্যতবোধ আর বাস্তবতাবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ। মা তুমি আমার দেখা এক অসাধারণ নারী।
মাঝেমধ্যে জীবনজুড়ে এক গভীর তমসা চলে আসে। যে মা সন্তানদের জন্ম থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত আগলে রাখেন পরম মমতায়, সেই মায়ের শেষ বয়সের নির্ভরতার জায়গা কেন আমরা সন্তানরা হতে পারি না? মা সন্তানের উফ শব্দে হাহাকার করে ওঠেন; কিন্তু আমরা মায়ের চোখের পানিতেও কষ্ট পাই না আজকাল। সন্তানদের এমন নির্মমতা মায়েদের কষ্ট সহস্রগুণ বাড়িয়ে দেয়।
কেবল বিশেষ দিবসে মাকে ভালোবাসি না বলে, মায়ের সব কষ্ট একটি দিনে উপলদ্ধি না করে, প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের উচিত মায়েদের ভালোবাসা, যত্ন করা। মায়ের বিকল্প দুনিয়ার আর কেউ পূরণ করতে পারে না। ভালো থেকো মা। মায়ের মোনাজাতে সন্তান থাকে যেভাবে, ঠিক সেভাবেই প্রতিটি সন্তানের মোনাজাতে মা থাকুক।
স্পেশালিস্ট, এক্সাটার্নাল কমিনিউকেশনস, ইনফো পাওয়ার লিমিটেড