তুমিই আমার বসন্ত

প্রতীকীছবি: সুপ্রিয় চাকমা

ঘড়িতে বেলা তিনটা বাজে। নবনী আনমনা হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। শীতের জরাজীর্ণতা কাটিয়ে প্রকৃতি নতুন রূপে সজ্জিত হচ্ছে। প্রকৃতির এই রূপ ভিন্নতর। আকাশে মৃদু রোদ্দুর ও হালকা হিমেল হাওয়া বইছে। পাখিদের কিচিরমিচির ডাক আর রাস্তার দুই পাশের গাছগুলো থেকে পুরোনো পাতাগুলো ঝরে পড়ছিল। গাছে নতুন পাতার আগমন হচ্ছে।

হিমেল হাওয়ায় নবনীর মাথার ঘোমটা পড়ে গিয়ে চুলগুলো বাতাসে উড়তে লাগল। নবনীর ক্ষত মনটা যেন মুহূর্তেই প্রাণ ফিরে পেল। প্রকৃতির রাজ্যে নিজেকে বিলিয়ে দিল। মৃদু রোদ্দুরের তাপে মুখটা রঙিন হয়ে গেল। তার মনে অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করছে।

বিলের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে নবনী প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। হঠাৎ সে লক্ষ করল, গাছের পুরোনো পাতাগুলো ঝরে পড়ছে। পাতাগুলো দেখে মনে হচ্ছে, বৃক্ষের জীবনে নতুন পাতার আগমন ঘটেছে। তাই বৃক্ষ পুরোনো পাতাগুলোকে বিসর্জন দিচ্ছে। নবনী চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ভাবল, প্রকৃতির আনন্দ দেখে কেন ঈর্ষান্বিত হচ্ছি। আমার জীবনেও যদি এমন বসন্ত আসত!

নবনী হাঁটতে থাকে আর পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে করে। একসময় তার জীবনে একজন এসেছিল বসন্তের কোকিলের মতো। আগমন ঘটেছিল শরৎকালে। শরতের মেঘাচ্ছন্ন বিকেলে ছেলেটি কাঁটাবনের ফুল হাতে নবনীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলেছিল, ‘আমি তোমার জীবনে সেই কাঁটা হতে চাই, যেই কাঁটার আঘাতে তুমি আমাকে কখনো ভুলতে পারবে না। হে নবনী, প্রিয়তমা, তুমি আমাকে কাঁটার মতো ভালোবেসো।’

নবনী হেসে বলেছিল, ‘তোমাকে আমি কাঁটার মতোই ভালোবাসব।’ কিন্তু সেই ভালোবাসার ক্ষত আজও শুকায়নি। নবনী জানে, তার জীবনে শরৎ, হেমন্ত আর বসন্ত সবই এক। কিন্তু কেন জানি এবার প্রকৃতির জীবনে বসন্ত দেখে তার মনে অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছে।

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে নবনী ফোন হাতে নেয়। হঠাৎ একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা, ‘হাই।’ সে কী মনে করে উত্তর দেয়, ‘হ্যালো।’ এরপর কথাবার্তা খুব একটা এগোয় না। মাঝেমধ্যেই সেই ছেলে মেসেজ পাঠায়। মেসেজগুলো পড়তে গিয়ে নবনীর মনে হয়, এই কি তবে আমার জীবনের বসন্তের বার্তা বহন করছে?

ছেলেটি লন্ডনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। সেই ছেলে। একই জেলার বাসিন্দা। দেখতে চিকন, তবে হাসিটা দারুণ। একদিন ছেলেটি মেসেজে জানায়, ‘তোমাকে অনেক ভালো মনের মানুষ মনে হয়।’
নবনী উত্তর দিতে গিয়ে প্রথমে আপনি সম্বোধন করে। তখন ছেলেটি বলে, ‘তুমি করে বলতে পারো না?’ এর পর থেকে নবনী তাকে তুমি বলেই সম্বোধন করতে শুরু করে। তাদের কথোপকথন গভীর হতে থাকে।

একদিন ছেলেটি নবনীকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করে, ‘তুমি কি আমার বসন্ত হতে পারবে? জীবনের বাকি বসন্ত তোমার সঙ্গে কাটাতে চাই।’ নবনীর মন কেঁপে ওঠে। সে ভাবে, এ কি সত্যিই হতে পারে? আমি কি জীবনে বসন্তের এমন স্পর্শ পাব?

বসন্ত বিকেলে শাড়ি আর রেশমি চুড়ি পরে দেখা করার পরিকল্পনা করে তারা। নবনী তখন ভাবতে থাকে, তুমি কি সত্যিই আমার জীবনের বসন্ত হবে?

গল্পটি এমন এক জাদুকরি অনুভূতিতে শেষ হয়, যেখানে নবনী এক নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার জীবনে সত্যিই বসন্ত আসবে কি না, তা হয়তো সময়ই বলবে।

বন্ধু, সিরাজগঞ্জ বন্ধুসভা