তন্দ্রা আজ মাকে নিয়ে এসেছে শিল্পকলা একাডেমির অডিটরিয়ামে, সারপ্রাইজ দেবে।
তন্দ্রার বয়স তখন চার বছর, ছোট ভাইয়ের বয়স দুই মাস। দেশে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলছে। ২ আগস্ট, রাত ১টা। গ্রাম পাহারা দেয় যে ছেলেরা, ওরা জানিয়ে গেল, পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামে ঢুকে পড়েছে, পালাতে হবে। অনিতা দেবী স্বামীর সঙ্গে তন্দ্রার হাত ধরে ছুটল। আসার সময় তার দুই মাসের শিশুটিকে আনতে পারেনি। দলের লোকজন বাধা দিয়েছে। শিশুটি পথে কাঁদলে ওরা ধরা পড়তে পারে, এই ভয়ে ছেলেটাকে কেউ আনতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে সন্তানকে খাটে শুইয়ে ওর মুখে দুধের বোতল দিয়ে নিজ হাতে নির্বাসন দিয়ে এসেছে। বারবার ছেলেটার মুখ মনে পড়ছিল।
কিছুদূর যাওয়ার পর শুনতে পায়, পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামে আগুন দিয়েছে। সব বাড়ি পুড়ে ছাই। অনিতা দেবীর হৃৎস্পন্দন যেন হঠাৎ থেমে গেল। নির্বাক স্থবির দেহটাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে দলের সঙ্গে পালাচ্ছে সে। হঠাৎ এলোপাতাড়ি গুলির বৃষ্টির একটা এসে তার স্বামীর বুকটা ভেদ করে গেল। চোখের সামনে স্বামীর দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ফিরে তাকানোর জো নেই। চলার গতি আরও দ্রুত করে পাষাণ হৃদয় নিয়ে মেয়েটার হাত ধরে একসময় সব হারিয়ে নিরাপদে পৌঁছাল ভারতের আশ্রয়কেন্দ্রে!
বিজয় দিবসের নেপথ্যে সম্ভ্রম হারানো ধর্ষিতের লজ্জা, অগণিত লাশের স্তূপে শকুনের উল্লাস, রক্ত আর অশ্রুবন্যা পাড়ি দিয়ে পতাকা উড়ল স্বাধীন দেশের। জাতীয় সংগীত বাজছে। একটা শ্বাসরুদ্ধকর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র শেষে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এল সবাই।
তন্দ্রার রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত ছায়াছবিটি যে তারই জীবনকথা। অনিতা দেবী কাঁদতে কাঁদতে সুর মেলাল, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় সত্যিই খুব ভালোবাসি!
কার্যনির্বাহী সদস্য, কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা