কলার পাতায় স্বাদের পিঠালি

পিঠালিফাইল ছবি

জামালপুর জেলার শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম পিঠালি। শুনে পিঠা মনে হলেও মূলত এটি গরুর মাংস, আতপ চালের গুঁড়া ও বাহারি মসলার সংমিশ্রণে তৈরি বিশেষ খাবার।

বাংলাদেশের প্রান্তিক জেলা জামালপুরের খাবারের কথা বলতে গেলে প্রথমে আসে পিঠালির নাম। বিখ্যাত এই খাবার অনেকে মিল্লি, মিলানি, ম্যান্দা নামেও ডাকেন। এর প্রধান উপকরণ মাংস, চালের গুঁড়া, পেঁয়াজ, রসুন, জিরাসহ প্রায় ১০ প্রকারের মসলা। সুস্বাদু এই খাবারের বিশেষত্ব হলো—এটির নরম মাংস, চর্বি ও হাড়, ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সঙ্গে কলাপাতায় পরিবেশন।

পিঠালির জন্য প্রথমেই দরকার হয় মাংসের। গরু, ছাগল, মহিষ বা মুরগির মাংস দিয়ে খুব সহজেই রান্না করা যায়। এ ক্ষেত্রে গরুর মাংস ভিন্ন স্বাদ এনে দেয়। মাঝারি বা বড় করে মাংস কেটে এরপর পাতিলে লবণ ও মরিচ দিয়ে সেটি সেদ্ধ করা হয়, এরপর চালের গুঁড়া দেওয়া হয় এবং পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মসলা যোগ করে বাগাড় দিতে হয়। এভাবে কিছু সময় পর তৈরি হয়ে যায় ধোঁয়া ওঠা লোভনীয় পিঠালির চেহারা। গরম পাতিলে পিঠালির ঘ্রাণ যেকোনো মানুষের জিবে জল এনে দিতে সক্ষম।

পিঠালির আরেক বিশেষত্ব হলো ডাল–ভাতের মতো প্রতিদিনের খাবার নয়। এটি মূলত উৎসবের খাবার। পিঠালির প্রচলন কীভাবে বা এটি প্রথম চালু হয় কখন, এর সঠিক কোনো ইতিহাস না থাকলেও প্রবীণদের ভাষ্য অনুযায়ী, আঠারো শতকের প্রথম দিকে জামালপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলজুড়ে টাঙ্গাইল এবং আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ এসে বিচ্ছিন্ন জনবসতি গড়ে তোলে। সে সময় ইংরেজ শাসনামলে গ্রাম্য সামাজিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। ধারণা করা যায়, সে সময়ে পিঠালি এক বিশেষ খাবার হিসেবে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের বাকি জেলাগুলোর মতো এখানে মানুষ সাধারণ খাবার খায়। কিন্তু আকিকা, বিয়ে, মৃত্যুবার্ষিকী, খতনা, চল্লিশা/লিল্লা, নির্বাচনী প্রচারণাসহ বিশেষ সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবার হিসেবে জামালপুরবাসীর পিঠালি থাকা চাই–ই চাই। এসব অনুষ্ঠানে ধনী-গরিব সবাই মাটিতে বসে কলাপাতায় গরম ভাত আর সুস্বাদু পিঠালি খান। কলাপাতা ছাড়া অন্য পাত্রে পিঠালির প্রকৃত মজা পাওয়া যায় না।

শিক্ষার্থী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি