বন্ধুদের রোপণ করা চারা গাছ এখন বৃক্ষে পরিণত হয়েছে

ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের এই গাছগুলো ফেনী বন্ধুসভার বন্ধুদের রোপণ করাছবি: লেখক

প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এই তো সেদিনকার ঘটনা, দুপুরে বিদ্যুৎ নেই, প্রচণ্ড গরম। বাসার আশপাশে গাছপালা কম থাকায় বাতাসও কম অনুভূত হচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো, ফেনী বন্ধুসভার উদ্যোগে প্রতিবছরই বৃক্ষরোপণ করা হয়। অতীতে রোপণ করা চারা গাছগুলোর কী অবস্থা এখন? গিয়ে দেখা দরকার।

যেই ভাবা সেই কাজ। ফোনে কথা হয় ফেনী বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভাইয়ের সঙ্গে। ২০১৭ সালে তিনি নিজ হাতে অনেকগুলো গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। বললাম, সেই গাছগুলো দেখতে যেতে চাই। এরপরই সিএনজি করে চলে গেলাম ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজে।

কলেজ গেটে একজন কনস্টেবল জানান, ভেতরে পরীক্ষা চলছে। এখন ঢুকতে দেওয়া যাবে না। পরে দেখা মিলল দীর্ঘদিন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত গোফরানুল হক লিটন ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি এসে জিজ্ঞেস করেন, ‘এই জহির ভাই কেমন আছেন, অনেক দিন পর দেখা। কী মনে করে এলেন?’ জহির ভাই বললেন, ‘বন্ধুসভার লাগানো গাছগুলো কেমন আছে দেখতে এলাম।’ ভেতরে আসেন বলে তিনি জানালেন, সেই ছোট চারা গাছ এখন অনেক বড় হয়ে গেছে।

জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজে চারা লাগানোর বড় কারণ, এখানের চারপাশে রয়েছে দেয়াল ও ভেতরে কোনো গবাদিপশুর বিচরণ নেই। এতে গাছ নষ্ট হয় না।’ দেখলাম বন্ধুসভার রোপণ করা গাছের মধ্যে রয়েছে আমড়া, আম ও লেবুগাছ।

গোফরানুল হক লিটন বলেন, ‘আমাদের কলেজে চারা রোপণের অনেক সুবিধা রয়েছে। এখানে কোনো চারা নষ্ট হয় না। শিক্ষার্থীরা গাছের প্রতি যত্নশীল। আমরাও গাছের প্রতিদিন যত্ন রাখি। অধ্যক্ষের নির্দেশ আছে, কোনো গাছ নষ্ট করা যাবে না। প্রচুর গাছ থাকায় কলেজ প্রাঙ্গণ সব সময় শীতল থাকে।’

বন্ধুরা কেবল গাছের চারা রোপণই করেন না, সেগুলোর নিয়মিত পরিচর্যাও করেন। তারই প্রমাণ এই গাছগুলো। ফেনী বন্ধুসভার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযাদ্ধা আবু তাহের বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সময় জানতে পারি ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের শহীদ মিনারের আশপাশে নানা ধরনের আগাছা জন্মেছে। বন্ধুসভার বন্ধুদের নিয়ে সেটা পরিষ্কার করা হয়। তখন ওই কলেজের মেয়েদের হোস্টেলের পাশে বন্ধুসভার উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের ফলের চারা লাগানো হয়েছিল। পরিচর্যায় গাছগুলো এখন বড় হয়ে ফল দিচ্ছে। হোস্টেলের ছাত্রীরা জলপাই–আমড়া খেতে পারে। আমাদের শ্রম সার্থক বলেই মনে করি।’

উপদেষ্টা অধ্যক্ষ আবদুল হালিম বলেন, ‘আমি যখন ফেনী বন্ধুসভার সভাপতি ছিলাম, তখন এই শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর চারা গাছ লাগানো হয়। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধুদের নিয়ে চারা গাছ পরিচর্যা করতাম, খোঁজ নিতাম। গত বছর ১৫ জুলাই শহরের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চত্বরে বন্ধুসভার উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। পিটিআই চত্বরে বিভিন্ন ফলদ, ঔষধি ও ভেষজ গাছের শতাধিক চারা রোপণ এবং স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিতরণ করেন বন্ধুরা।’

সাধারণ সম্পাদক, ফেনী বন্ধুসভা