আব্বা, আপনার মেয়ে এখন একাই সবকিছু করে

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

প্রিয় আব্বা,

কত বছর আপনাকে দেখি না! আপনি কি অনুভব করতে পারেন, আমার কেমন লাগে? আমি যে বড্ড একা। আজকাল অনেক বেশি একা হয়ে গেছি। আপনি চলে যাওয়ার পর আর কারও হাত ধরে হাঁটা হয়নি, কারও সঙ্গে হেঁটে হেঁটে কথা বলা হয়নি। সময় পেলে দৌড়ে অফিসে চলে যেতাম। অথবা আপনি চলে আসছেন আমাকে দেখতে। দুপুরে লাঞ্চ করেছি কি না? আমি খেলাম কি না? আমার কিছু লাগবে কি না! আপনি হঠাৎ হঠাৎ হোস্টেলে চলে আসতেন আমাকে না জানিয়ে। হাতে থাকত অসংখ্য খাবার।

আব্বা জানেন, আপনি চলে যাওয়ার পরে এত বছরেও কেউ আমাকে দেখতে আসে না। কেউ আমার খোঁজ নেয় না, কেমন আছি জানতে চায় না! হাজারো অসুস্থতায় কেউ আসে না। আব্বা, আমি আপনাকে নিষেধ করে বলতাম যে আমার জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসতে হবে না। কেন নিষেধ করতাম, জানেন? এই বৃদ্ধ বয়সে আপনার কষ্ট হবে বলে। খুব গর্ব করে বলতাম, আমি তো সব রান্না করে খাই; কেন নিয়ে আসতে হবে? সত্যি বলতে, আব্বা তখন আমার অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। খাওয়াদাওয়া সমস্যা হতো। জীবনে কখনো বাসার বাইরে থাকিনি। সুস্বাদু না হলে কোনো খাবার খেতাম না। আম্মা যদি রাগ করে রান্না না করতেন, আপনি অফিস শেষ করে এসে নিজে রান্না করে দিতেন। খুব হাস্যকর লাগত মাঝেমধ্যে, আপনি যখন বেগুন দিয়ে মাংস রান্না করতেন, পাশে বসে খাইয়ে দিতেন। অনেক মিস করি আব্বা। এখন আর হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট  ভোরবেলায় বলেন না, আপনার কল এসেছে। আপনার বাবা নিচে অপেক্ষা করছেন। আপনি যেখানে বসে অপেক্ষা করতেন, আজও সেই জায়গাটায় গিয়ে বসে থাকি।

আব্বা কেউ আসে না আমাকে দেখতে। একটা প্রাণীও না। আপনি চলে যাওয়ার পরে আমার জীবনে কোনো পুরুষ নেই। ভালো লাগে না কাউকে আর। আমরা কত জায়গায় বসে গল্প করতাম। অফিস ফাঁকি দিয়ে, অফিসের শেষে।

আপনার অনেক স্বপ্ন ছিল মেয়েকে নিয়ে। মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, নিজে সবকিছু করবে, আত্মবিশ্বাসী হবে, কাজ করবে, নাম করবে। মানুষের উপকার করবে। আব্বা, আপনার মেয়ে এখন একাই সবকিছু করে। মানুষের উপকার করে। সৎ থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। হালাল টাকা উপার্জন করে।

আব্বা প্রতিটি কাজে, প্রতিটি মুহূর্তে আপনাকে মনে পড়ে। আপনার হাত দুটি যদি কারও সঙ্গে মিল পাই, আমি ওই ব্যক্তির হাতের দিকে তাকিয়ে থাকি। সৌভাগ্য হলো, আমার হাতটা আপনার হাতের মতন। অনেকের মধ্যে আপনাকে খুঁজে বেড়াই। জানি, তাঁরা কেউই আমার বাবার মতন হবে না। ভয়ে কাছে যাই না। আব্বা, আমার যখন কষ্ট হতো অনেক কান্নাকাটি করে ঘুমাতাম; ভোরে টের পেতাম, আপনি চুপ করে রুমে এসে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে যেতেন। সেই স্পর্শ আমি আজও অনুভব করি। যখন অনেক কষ্ট হয়, হতাশ লাগে; ভোরবেলার সেই স্পর্শ অনুভব করার চেষ্টা করি। অনুভব করি, আপনি আছেন। খুব ইচ্ছা করে, সত্যি সত্যি আপনার স্পর্শ পেতে, আদর পেতে। আব্বা, আপনাকে কখনো বলা হয়নি কতটা ভালোবাসি। আপনাকে অনেক ভালোবাসি। কেন চলে গেলেন আমাকে এতটা একা করে? আমার বিশ্বাস, আপনি ভালো আছেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনার মেয়ে যেন আপনার আদর্শ নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারে।

ইতি,
আপনার মেয়ে

সহসভাপতি, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা