আমার একুশ

ধানখেতের পাশে কলাগাছ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে শহীদ মিনার। পানিগাতী, দিঘলিয়া উপজেলা, খুলনা। প্রতীকীছবি: সাদ্দাম হোসেন

ফেব্রুয়ারি মানেই একুশ তারিখের অপেক্ষা। খুব ভোরে উঠে আমার কাছে থাকা ছোট কাপড়ের পতাকা কাঠিতে লাগিয়ে সারা দিন ওড়াতাম বারান্দায় বেঁধে। আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে পতাকা খুলে আবার রেখে দিতাম। যখন কাপড়ের পতাকা ছিল না, তখন কাগজের পতাকা থাকত।

শুধু পতাকা নিয়েই নয়। তখন স্কুলে কলাগাছ কেটে পুরোনো পত্রিকা দিয়ে মুড়িয়ে নির্মাণ করা হতো অস্থায়ী শহীদ মিনার। আগের রাতেই সব প্রস্তুতি শেষ হতো। একুশের সকালে স্কুলে যেতাম। দেশাত্মবোধক গান বাজত মাইকে। কখনো কখনো আলোচনা সভা হতো, কখনো আবার বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হতো। দুপুর গড়িয়ে পুরস্কার বিতরণও হতো। বিকেলে দেশের গানের সুর পেতাম। আর বিটিভিতে দিনটি ঘিরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার হতো।

প্রাথমিকের দোর পেরিয়ে মাধ্যমিকে পড়ার সময় স্কুলের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিয়ে যাওয়া হতো উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। উচ্চমাধ্যমিকেও প্রভাতফেরিতে যেতাম।

এখন ফেলে আসা সময়ের স্মৃতি মনে পড়ে। সেই প্রাইমারি স্কুলে কয়েক বছর আগে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক থেকে এখনো প্রভাতফেরিতে দল বেঁধে শিক্ষার্থীরা যায়, কিন্তু সেখানে সাদা শার্ট পরা এই আমিটা আর থাকি না। উচ্চমাধ্যমিকের শেষ বর্ষে কলেজের হয়ে ফুল নিয়ে গিয়ে আমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দলের সঙ্গে দেখা। পুনরায় যেন আমি স্কুলের হয়ে অংশ নিলাম সেখানে।

একেবারে শৈশবে যেমন কাগজের পতাকায় বাড়ির এক পাশ সাজাতাম। তেমনি পাটকাঠি দিয়ে তৈরি করতাম শহীদ মিনার। ধুলাতে হাফপ্যান্ট পরে বসে থাকতাম সেখানে। পড়ে থাকা শিমের ফুল এনে সেখানে রাখতাম।

আমার একুশ মানেই শহীদ মিনার ঘিরে নীরব স্মৃতি। স্মৃতিরা ফিরে আসুক গল্প কথায়, একুশের প্রেরণায় উজ্জীবিত থাকুক তারুণ্য।

শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর