শহরের যান্ত্রিক কোলাহল আর একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে আমরা কত কিছুই না করি। আর সেটা যদি হয় প্রাণবন্ত সতেজ সামুদ্রিক হাওয়া ও স্বচ্ছ নীল জলরাশিতে হেঁটে বেড়ানো, তাহলে তো কথাই নেই। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ছন্দময় ঢেউ, দিগন্তে মিশে যাওয়া আকাশি জলের মনোরম দৃশ্য–প্রশান্তির আশ্রয়ে সেন্ট মার্টিন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের একমাত্র প্রবালদ্বীপের নাম সেন্ট মার্টিন। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপ প্রায় ৪৫০ বছর আগে জেগে ওঠে। দ্বীপটি প্রথম আরব বণিকদের নজরে আসে। তাঁদের হাতেই ‘জাজিরা’ নামকরণ হয়। পরবর্তী সময়ে এটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত হয়। পর্যায়ক্রমে ব্রিটিশদের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ হয় সেন্ট মার্টিন। ১৮৯০ সালে সর্বপ্রথম কিছু মৎস্যজীবী এ দ্বীপে বসতি স্থাপন করেন।
টেকনাফ ঘাট থেকে সূর্যের ম্লান হাসিতে সিন্দবাদ জাহাজে শুরু হয় আমাদের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ। পথে গাঙচিলের অপরূপ নৃত্যে মুখরিত সব পর্যটক। নীল জলরাশির সঙ্গে জাহাজের ধাক্কায় সৃষ্টি হওয়া সাদা ঢেউ যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছিল বারবার। অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে যাই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। পছন্দের হোটেলে উঠে বিশ্রাম নিয়ে চলে যাই সৈকতে। নীল জলরাশিতে মানুষের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। মনে হচ্ছিল, প্রতি মুহূর্তে সমুদ্রের বুকে ধুয়ে যাচ্ছে সব কোলাহল আর একঘেয়েমি। অবকাশের আমেজে মুখর চারদিক। আমরাও শুরু করি সমুদ্রে ঝাঁপাঝাঁপি, ঢেউয়ের সঙ্গে নিজেকে ভাসানোর খেলায়। সন্ধ্যায় উপভোগ করি সূর্যাস্ত।
রাতের সেন্ট মার্টিন যেন স্বপ্নের মতো রূপ ধারণ করে। সেন্ট মার্টিনের পশ্চিমপাড়ায় জমে অন্য রকম আসর। একদিকে সমুদ্রের গর্জন, অন্যদিকে বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও প্রিয়জনকে নিয়ে সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ পার্টি। সামুদ্রিক মাছের বৈচিত্র্যের অভাব নেই। রাত অনেকটা চলে যায় এসব উপভোগ করে।
পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়ি সাইকেল নিয়ে। এখানে সহজেই ঘণ্টাপ্রতি সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থায়ী ও সমুদ্রের পাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানে। সাইকেল নিয়ে ঘুরলাম দ্বীপের বিভিন্ন পয়েন্ট ও চারপাশ। সবকিছু ছিল দারুণ উপভোগ্য। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আয়তন আট কিলোমিটার, যা সাধারণত পাঁচ ভাগে বিভক্ত। উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মাঝেরপাড়া, পূর্বপাড়া ও পশ্চিম পাড়া। দক্ষিণে রয়েছে ছেঁড়াদ্বীপ ও বাংলাদেশের শেষ সীমান্ত।
এভাবেই মনোরম দৃশ্য, সামুদ্রিক গর্জন, বাহারি মাছের মুখরোচক স্বাদে আনন্দে কেটে গেল সেন্ট মার্টিন দ্বীপে দুই দিন। অনুভূতি ছিল মনোমুগ্ধকর। তবে পর্যটক হিসেবে আমাদের দায়িত্ববোধ ছিল অনেক। দ্বীপে ভ্রমণের সময় আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা, লাল পতাকায় চিহ্নিত ‘রিপ-কারেন্ট’ জোন এড়িয়ে চলা, দ্বীপের সৌন্দর্য রক্ষায় সচেতনতা আমাদের তৃপ্তি এনে দেয়। তাই দেরি না করে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির লীলাভূমি সেন্ট মার্টিনে।
সাংগঠনিক সম্পাদক, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা