মেসি আর্জেন্টিনার এবং কেবল আর্জেন্টিনার

আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসিছবি: রয়টার্স

‘মেসি যতটা না আর্জেন্টিনার, তার চেয়েও বেশি বার্সেলোনার’ কথাটি একটা পর্যায়ে ব্যাপক প্রচলিত ছিল। এমনকি আর্জেন্টিনার জনগণও বলতেন, মেসি তাঁদের দেশকে ভালোবাসেন না!

অভিযোগটি সত্য না হলেও খুবই গুরুত্বর। মানুষের এমন অভিযোগের পক্ষে যথার্থ যুক্তি রয়েছে। কারণ, একদিকে লিওনেল মেসি বার্সেলোনার জার্সিতে একের পর এক রেকর্ড, গোল করেই যাচ্ছেন। তত দিনে নামের পাশে যুক্ত হয়ে যায় রেকর্ড চারটি ব্যালন ডি’অর। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দিলে তাঁর পায়ে গোলের দেখা পাওয়া যেত না। এ কারণে তাঁকে সেরা মানতে চাইতেন না অনেকেই।

আর্জেন্টিনার হয়ে টানা ৬ ম্যাচে গোল করলেন লিওনেল মেসি
ছবি: রয়টার্স

তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায় ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের পর থেকে। সেবার অতিমানবীয় পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে নিয়ে যান। সোনালি ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে না পারলেও জিতেছিলেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। পাশাপাশি জিতে নেন নিজের দেশের মানুষের মনও।

আর্জেন্টিনার ফুটবলকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। নিজের ফুটবল–শৈলী দিয়ে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। মেসির মধ্যেও সেই ছায়া খুঁজে বেড়ান আর্জেন্টাইনরা। কিন্তু শুরুর দিকে আকাশি-নীল জার্সি গায়ে কেবল নিজের ছায়া হয়েই থাকতেন পিএসজি তারকা। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। অনেক আগেই আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বাধিক গোলের রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছেন। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা ৯৩। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার গোলসংখ্যা ৫৫টি, ব্যবধান অনেক। এখনো খেলছেন, এমন তারকাদের মধ্যে ২৭ গোল নিয়ে তালিকায় সপ্তম স্থানে ডি মারিয়া। তিনিও ক্যারিয়ারের শেষ দিকে। আর ২৯ গোল নিয়ে ম্যারাডোনার অবস্থান ৬ নম্বরে।

দেশটির হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডও মেসির দখলেই (১৬৬)। এ তালিকায় এখনো খেলে যাচ্ছেন, এমন ফুটবলারদের মধ্যে ডি মারিয়া আছেন চতুর্থ স্থানে (১২৫)। তালিকায় ম্যারাডোনার অবস্থান ১১তম (৯১ ম্যাচ)। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বাধিকসংখ্যক গোলের রেকর্ড গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার দখলে (১০টি)। দ্বিতীয় সর্বাধিক ৮টি করে গোল রয়েছে ম্যারাডোনা ও গুইলারমো স্টেবিলের। মেসিরও এখন গোল ৮টি। আগামী ম্যাচেই হয়তো ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যাবেন তিনি।

আর্জেন্টিনার সংবাদ সম্মেলনে লিওনেল মেসি
ছবি: রয়টার্স

এত সব রেকর্ডের ভিড়ে কেবল বিশ্বকাপটাই ছুঁয়ে দেখতে পারেননি লিওনেল মেসি। তবে গত বছর প্রায় একক নৈপুণ্যে কোপা আমেরিকা জিতে আর্জেন্টিনার দীর্ঘ শিরোপা–খরা কাটিয়েছেন। এবার বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেওয়ার পালা।

সেই পথে কত দূর যেতে পারবেন সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এরই মধ্যে এটা প্রমাণ করেছেন যে নিজের শেষ বিশ্বকাপে সোনালি ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখছেন না তিনি। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের পর বলেছিলেন বিশ্বাস রাখতে, সমর্থকেরাও ভেঙে পড়েননি। লিওনেল মেসি কিছু একটা করবেন, সেই আশায় খেলা দেখেছেন। হতাশ করেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। দ্বিতীয় ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নিজে গোল করার পাশাপাশি সতীর্থকে দিয়ে করিয়েছেন আরও একটি গোল।

সমর্থকেরা জানেন, বিশ্বকাপ জিততে হলে মেসিকে বড় অবদান রাখতে হবে। সেটা এলএমটেন নিজেও জানেন। তা ছাড়া যাঁকে আদর্শ মেনে বেড়ে ওঠা, সেই কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার মতো নিজের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করে রাখতেও যে বিশ্বকাপ জিততেই হবে!