দৃষ্টিশক্তি হারানো এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার গল্প রুমি

‘রুমি’ সিরিজে চঞ্চল চৌধুরীছবি ফেসবুক থেকে

রুমি একজন সিআইবি কর্মকর্তা। যেকোনো রহস্যজনক কেস সমাধানে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে তার বেশ সুনাম। রুমির সাফল্যে সবচেয়ে বেশি ঈর্ষা করে কলিগ অফিসার আরিয়ান। এদিকে আরেকজন কলিগ এশা বেশ পছন্দ করে রুমিকে। সে নানাভাবে রুমির প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করে। এশা তার জন্মদিনে শুধু রুমিকে আমন্ত্রণ জানায়, সেখানে সরাসরি মনের কথা বলে ফেলে। কিন্তু রুমি নিজের জীবনের সঙ্গে এশাকে জড়াতে চায় না।

রুমির ইন্টিউশন ক্ষমতা প্রবল, আর ইন্টারোগেশন প্রক্রিয়া অন্যদের চেয়ে আলাদা। চায়ের কাপে কথার মায়াজালে সে তথ্য বের করে আনে। সব রহস্যের সমাধান করতে পারলেও নিজ মায়ের মৃত্যুর রহস্য রুমি সমাধান করতে পারেনি।

রুমি সিরিজে ভিকি জাহেদের চমৎকার গল্প বলার কৌশল শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য আকৃষ্ট করে রেখেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, কালার গ্রেডিং, ভি এফ এক্স অসাধারণ।

ভিকি জাহেদের সব সৃষ্টিতে বিশেষ মাত্রা যোগ করে আবদুল্লাহ আল সেন্টু, তার চরিত্রের নাম তরিকুল। সে রুমির ঘরের সব কাজকর্ম করে। তার রান্না করা চাউমিন রুমির বেশ পছন্দ। প্রায়ই দেখা যায়, ‘পুরোনো সেই দিনের কথা বলবে কী রে হায় ও সে’ গানটি শিস বাজাত রুমি। রুমির জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনা নিয়ে এগিয়ে যায় গল্প।

থ্রিলার গল্পে ভিকি জাহেদ বেশ কয়েক বছর দারুণ সব কাজ দিয়ে আসছেন। তাঁর নির্মিত পুনর্জন্ম, আমি কি তুমি?, রেডরাম, শুক্লপক্ষ, টিকিট, আরারাত দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রতিটি নাটকের আলাদা গল্প, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, ভিন্নধর্মী মেসেজ ভিকি জাহেদকে জনপ্রিয় ফিকশন নির্মাতার আসনে বসিয়েছে।

রুমি সিরিজে কয়েকটি লাইন মনে দাগ কাটে। যেমন সবাই বলে মৃত্যু দুঃখজনক; কিন্তু কখনো কখনো জীবন মৃত্যুর চেয়েও বেশি দুঃখজনক। তুমি বলতে থাকো ‘আমি মরে গেছি’ অথচ তুমি বাঁচো। অথচ তুমি বেঁচে থাকো। তোমার স্রষ্টা তোমাকে বাঁচায়, তোমার স্রষ্টা তোমাকে বাঁচিয়ে রাখে!’ ‘যা কিছু হারাবা তার জন্য দুঃখ করবা না। কারণ, সেটা তুমি আবার ফেরত পাবা। আরেকভাবে, আরেকরূপে!’ ১৩ শ শতাব্দীর ফার্সি কবি জালাল উদ্দিন রুমির লেখা লাইনগুলো যেন আমাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।

রুমি সিরিজে ভিকি জাহেদের চমৎকার গল্প বলার কৌশল শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য আকৃষ্ট করে রেখেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, কালার গ্রেডিং, ভি এফ এক্স অসাধারণ।

দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর নতুন এক রহস্য স্বপ্ন হয়ে আসে রুমির কাছে। মনের অনুসন্ধানী চোখে যেন নতুন একটি কেসের সমাধান করার জন্য উদ্‌গ্রীব ছিল। ঘটতে থাকে একের পর এক রহস্যময় ঘটনা। রুমি প্রতিদিন একটি মেয়েকে স্বপ্নে দেখে, প্রতিবার ভিন্নভাবে মেয়েটিকে স্বপ্নে কেউ মেরে ফেলে। বাস্তবেও স্বপ্নের মেয়েটির ঘটনা তদন্ত করার দায়িত্ব পড়ে অফিসার এশার ওপর। রুমির দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে সব মিলে গিয়ে প্রমাণ করে দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর রুমির ইন্টিউশন ক্ষমতা আরও বেড়ে গেছে।

সিরিজটির শেষ ২০ মিনিটে সব রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। তরিকুল ও রুমির মায়ের মৃত্যু হয় তার যমজ ভাইয়ের দ্বারা। শেষ দৃশ্যে রুমি মুখোমুখি হয় তার যমজ ভাইয়ের সঙ্গে। তারপর একজন বেঁচে থাকে, আরেকজন মারা যায়। সে একজনটা কে? রুমি নাকি তার যমজ ভাই? আমার কাছে মনে হয়েছে দুর্ঘটনায় রুমি দৃষ্টিশক্তি হারায়নি, এটা রুমির একটা পরিকল্পনা ছিল। কেন সে এমনটা করেছে? নিশ্চয়ই খুব দ্রুত জানতে পারব। সবশেষে ঠোঁটে পুরোনো সেই দিনের কথা শিস এটাই প্রমাণ করে রুমি বেঁচে আছে। আর সে খুঁজে নেয় জীবনসঙ্গী হিসেবে এশাকে।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা