জিম্মি জাহাজে টাঙ্গাইল বন্ধুসভার সাব্বির, সন্তানের ফেরার অপেক্ষায় পরিবার

বন্ধুসভার বন্ধু সাব্বির হোসেনফাইল ছবি: সংগৃহীত

মোজাম্বিক থেকে ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে একজন টাঙ্গাইল বন্ধুসভার বন্ধু ও সাবেক অর্থবিষয়ক সম্পাদক সাব্বির হোসেন।

তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে। বাবার নাম হারুনুর রশিদ। ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন সাব্বির হোসেন। টাঙ্গাইলের কাগমারি এম এম আলী কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে এমভি আবদুল্লাহ নামের পণ্যবহনকারী জাহাজের মার্চেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি নেন।

টাঙ্গাইল বন্ধুসভার বন্ধুদের সঙ্গে সাব্বির হোসেন
ফাইল ছবি: সংগৃহীত

একমাত্র ছেলের জিম্মির খবর শুনে বাবা হারুনুর রশিদ হাউমাউ করে কাঁদছেন। মা সালেহা বেগম বুক চাপড়িয়ে কাঁদছেন আর বিলাপ করছেন। একমাত্র বোন মিতু আক্তার ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন, তাঁর ভাই যেন জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে তাঁদের কাছে আবার ফিরে আসেন। পরিবারটির সদস্যদের কান্না থামাতে গ্রামের লোকজন বাড়িতে এসে ভিড় করছেন, সান্ত্বনা দিচ্ছেন। সবার একটাই দাবি, সরকার যেন দ্রুত সাব্বিরকে মুক্ত করে আনে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাব্বির হোসেন অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন। বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। বোনের বিয়ে হয়েছে। সাব্বিরের বাবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত প্যারাইলাইজড হয়ে শয্যাশায়ী। ছেলের চাকরি হওয়ার পর শয্যাশায়ী স্বামীকে নিয়ে সহবতপুরে বাবার বাড়িতে বসবাস করে আসছেন সালেহা বেগম। সহবতপুরের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে এখন কেউ আর থাকেন না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সাব্বির।

‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। ২৩ নাবিক, ক্রুসহ জাহাজটি জিম্মি করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা
ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইল বন্ধুসভার সভাপতি আবু আহমেদ শেরশাহ বলেন, ‘বন্ধু সাব্বিরসহ সবাই যেন জিম্মিদশা থেকে দ্রুত মুক্তি পান, সে জন্য সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আশা করছি সরকারের সহযোগিতায় শিগগিরই জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে সবাই পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারবেন।’

যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনের তথ্য অনুযায়ী, জিম্মি করার সময় জাহাজটির অবস্থান ছিল সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে ভারত মহাসাগরে। বর্তমানে জাহাজটিকে গ্যারাকাদ নোঙর এলাকা থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে দস্যুরা নোঙর করে রেখেছে। লন্ডন ও কুয়ালালামপুরভিত্তিক জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো (আইএমবি) থেকে তথ্য নিয়ে জাহাজটির এই অবস্থানের তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। তিন মাস আগে গ্রুপের বহরে যুক্ত হয়েছিল জাহাজটি।

প্রচার সম্পাদক, টাঙ্গাইল বন্ধুসভা