রাখীর মঙ্গল শোভাযাত্রা

পয়লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রাফাইল ছবি

রাখী আজ অনেক খুশি। বাবা বলেছে, এবারের পয়লা বৈশাখে চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখাতে নিয়ে যাবে। রাখী ঢাকার একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বাবা প্রায়ই তাকে গল্প করে শোনান পয়লা বৈশাখ, বসন্ত উৎসব, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তারা কীভাবে পালন করে। জাতিসংঘের ইউনেস্কো বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যোগ করার পর স্কুলের ড্রইং টিচার রুমা ম্যামের নির্দেশনায় রাখী ও তার বন্ধুরা তাদের স্কুলের মাঠে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। গত বছর সে রাত জেগে পেঁচা, বাঘ, মাছ এসবের মুখোশ বানিয়েছিল।

রাখী যখন একটি লক্ষ্মীপ্যাঁচার মুখোশে রং করছিল, তখন দাদি বললেন, গ্রামের খেত পাকা ধানে ভরে গেলে পোকা আসে ফসল নষ্ট করতে। আর তখনই আকাশ থেকে প্যাঁচা নেমে এসে সব পোকামাকড় খেয়ে ফেলত। তাই কৃষকের কাছে প্যাঁচা হলো মঙ্গলের প্রতীক। যে বছর প্যাঁচা আসত না, সে বছর পোকামাকড় অনেক ধান নষ্ট করত। আর প্যাঁচা পোকামাকড় খেয়ে ফেললে কৃষকের গোলা ভরে উঠত সোনালি ধানে। তাই তো কৃষকবধূরা আদর করে প্যাঁচাকে নাম দিয়েছে লক্ষ্মীপ্যাঁচা।

গত বছর মঙ্গল শোভাযাত্রায় গিয়ে রাখী তো আনন্দে আত্মহারা। কাঠ, বাঁশ, কাগজ দিয়ে বানানো হয়েছিল শোভাযাত্রার প্রধান আকর্ষণ বড় বড় প্রতিকৃতি। ছিল বাঘের পিঠে টেপা পুতুল, যা বাংলায় সম্রাটদের আগমনের কথা মনে করিয়ে দেয়। ছিল মাছের ঝাঁক, যা নদীমাতৃক বাংলাদেশের জেলেদের সমৃদ্ধির প্রতীক, রিকশা, রসের হাঁড়ি, হাতি, ঘোড়া, রাজা-রানির মুখোশ, অবাধ স্বাধীনতার প্রতীক পাখি, বিড়ালের মুখে ইঁদুর, এখানে বিড়াল হলো দেশের সাধারণ জনগণ আর ইঁদুর হলো দুর্নীতিবাজদের প্রতীক। সাধারণ জনগণ সেই সব লোভী ঘুষখোরকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া ছিল দুইটি বিশাল বড় দানবাকৃতির কাঠামো; যেগুলো মৌলবাদ ও ধর্মান্ধ অপশক্তির প্রতীক। যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধ্বংস করতে চায় বাঙালির হাজার বছরের শিল্প, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে। এ ছাড়া ছিল লোকশিল্পের নিদর্শন বিশাল বড় টেপা পুতুল, মায়ের কোলে শিশু। রাখীর এ সময় তার মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। তখন তার দুই বছর বয়স, মা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। ছোটবেলায় মা–ও তাকে এভাবে কোলে নিয়ে কত খেলা করতেন। মায়ের কথা ভেবে এত আনন্দের মধ্যেও তার চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।

এ বছরও রাখী বাবাকে বলে রেখেছে, সকালে ঘুম থেকে উঠে মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাবে। বাবাও খুশি দেশের সংস্কৃতির প্রতি মেয়ের এই আগ্রহ দেখে। তাই অফিস থেকে ফেরার পথে মেয়ের জন্য পয়লা বৈশাখের উপহার লাল পাড় গরদের শাড়ি নিয়ে এলেন।

সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা