বাবাকে হারালেও তাঁর আদর্শ নিয়ে বেঁচে আছি

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শুভংকর বড়ুয়া। ১৯৭১ সালে ভারতের দেমাগ্রী ও পালাটানা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে এসে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাইফেল ও গ্রেনেড চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তিনি ১ নম্বর সেক্টরের ১৬৯ নম্বর গ্রুপে যুদ্ধ করেন। জুলাইয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, গশ্চি পাঠানপাড়া খালে রাজাকার অপারেশন এবং সত্যপীরের মাজারের কাছে বিদ্যুৎ টাওয়ার অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ শেষে বাবা গ্রুপ কমান্ডার বিমলেন্দু রায়ের কাছে রাইফেল ও গ্রেনেড জমা দেন।

বাবা একজন মহান হৃদয়ের সমাজসেবক ছিলেন। যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে কুয়েতে অবস্থানকালে ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের সময় তাঁকে বন্দী করে জর্ডানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জাতিসংঘের সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসেন। তিনি নিজের জমি বিক্রি করে বন্ধুর মেয়েসহ অনেক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। যে যখনই তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে এসেছে, কাউকে খালি হাতে ফেরাননি। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দক্ষিণ রাউজানে তাঁকে গার্ড অব অনার দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাহ করা হয়।

ছোটবেলায় বাবাকে হারালেও তাঁর আদর্শ নিয়ে বেঁচে আছি। বাবা সব সময় বলতেন, জীবনে উপকার করতে না পারলেও যেন কারও ক্ষতি না করি। একদিন বাড়ির এক কাজের শ্রমিককে আমি আঘাত করলে বাবা তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। আমিও ক্ষমা চাই। সেদিন থেকে সংকল্প করি, কাউকে আঘাত নয়, বরং ভালোবাসা দিয়ে মানবসেবা করে যাব। চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত মানুষ, সমাজ ও দেশের কল্যাণে কাজ করার।

বন্ধু, রাউজান বন্ধুসভা