তোমাকে দেখেছিলাম কোনো এক সকাল বেলা, যেদিন রাস্তা ছিল পুলিশের দখলে। শাসকের চাপের মুখে যখন সবার গলার স্বর চুপ হয়ে গিয়েছে, তোমাকে দেখেছি আমি প্রতিবাদী রূপে।
চারদিকে সুনসান নীরবতায় গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়লে যেমন শব্দ হয়, সবার মনোযোগ সেদিকে সরে যায়, হঠাৎ এক ভরাট নারীকণ্ঠ শুনে আমারও একই অবস্থা হলো।
স্পষ্ট মনে আছে, ক্যামেরা হাতে আমি দৌড়ে গিয়ে থমকে গিয়েছিলাম তোমায় দেখে। কিছু সময়ের জন্য আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাই। মুষ্টিভরা হাত ওপরে তুলে যখন স্লোগান ধরেছিলে, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে মানতে হবে’। বিশ্বাস করো, যদি আমার হাতে ক্ষমতা থাকত, তখনই আমি সব দাবি মেনে নিতাম।
অবরুদ্ধ শহরে শিখা হয়ে তুমি অপরাধীদের আখড়ায় আগুন লাগিয়েছিলে। সেই আগুনে আমার মনের ভেতরও ক্ষত সৃষ্টি হয়, যা আজও রয়ে গেছে।
পরনে সবুজ সালোয়ার-কামিজ আর কপালে দেশের পতাকা বেঁধে তোমার স্লোগান দেখে মনে হয়েছিল, কোনো এক অগ্নিপিণ্ড এসে অপরাধীদের আখড়া জ্বালিয়ে–পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে। তোমার চোখেমুখে ছিল আগুন, কপাল বেয়ে টপ টপ করে ঘাম ঝরছে। যেন কোনো পূজারির ঘর থেকে চুরি করে আনা দেবী। তোমার কণ্ঠ শুনে নিরাপত্তারক্ষীরা লাঠিচার্জ শুরু করে। তুমি আঘাত পাওয়ার পর ক্ষণিকের জন্য মনে হলো, আমার পৃথিবী দুই টুকরা হয়ে গেছে। ক্যামেরা ফেলে তোমাকে কোলে তুলে দৌড় শুরু করি। জ্ঞান ছিল না তখন তোমার। যখন জ্ঞান ফেরে, মনে হয়েছিল পুরো পৃথিবী আমার হাতের মুঠোয়। তুমি আমার হাত ধরে বলেছ, ‘ধন্যবাদ ইশরাক ভাই।’
সেই হাত আজও ছাড়িনি। এখন তোমার হাত ধরার একক অধিকার আমার।
লেখকের ঠিকানা: টিলাগড়, সিলেট