ভিন্ন নেইমারকে দেখবে বিশ্ব

ব্রাজিলের অনুশীলনে নেইমারছবি: এএফপি

যদি প্রশ্ন করা হয়, বিশ্বের কোন দেশ কিংবদন্তি ফুটবলার তৈরির কারখানা? যাঁরা ফুটবলের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের সবার একবাক্যে জবাব হবে ব্রাজিল। সেই পেলে থেকে শুরু। এরপর গারিঞ্চা, রোনালদো, জিকো, সক্রেটিস, জাইরজিনহো, রোমারিও, ফ্যালকাও, রোনালদিনহো, কাফুসহ যুগে যুগে অসংখ্য কিংবদন্তি ফুটবলারের জন্ম হয়েছে দেশটিতে। তবে পেলে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তা আর কেউ পারেননি। ক্যারিয়ারে তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন। তাও মাত্র ৩১ বছর বয়সে, যা ইতিহাসে আর কারও নেই।

ব্রাজিলিয়ানরা অবশ্য আশা ছাড়েন না। পেলের মতো যদি আবারও কারও জন্ম হয়! তাই তো তরুণ অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে ‘নতুন পেলে’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু তাদের কেউই নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। অল্পতেই ঝরে গেছেন। এ তালিকায় ব্যতিক্রম নেইমার। ২০১০ সালে হলুদ জার্সিতে অভিষেকের পর থেকে এখনো দলটির সেরা তারকা এই স্ট্রাইকার। জাতীয় দলের জার্সিতে এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ৭৫ গোল। পেলেকে ছাড়িয়ে যেতে প্রয়োজন আর মাত্র ৩টি গোল। সেটা যে এ বিশ্বকাপেই হয়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু গোলসংখ্যায় পেলেকে ছাড়িয়ে গেলেই কি তিনি সেরা হয়ে যাবেন?

এর উত্তর হবে ‘না’। আর কথাটি স্বয়ং নেইমারও মানেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, গোলসংখ্যায় ছাড়িয়ে গেলেও তাঁকে যেন কখনোই পেলের সঙ্গে তুলনা করা না হয়। কারণ, পেলে একজনই। তবে নেইমার সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে না পারলেও চেষ্টা করবেন তাঁর নাম যেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তিদের কাতারে থাকে। এর জন্য সবচেয়ে বড় মঞ্চ এবারের বিশ্বকাপ। যে অভিযান আজ সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে।

কাতারে পৌঁছানোর পর নেইমার
ছবি: রয়টার্স

অবশ্য পিএসজি তারকা এরই মধ্যে কিংবদন্তিদের কাতারে চলে গেছেন, কিন্তু সেটা অনেকেই মানতে চান না। বিতর্ক রয়েছে। কারণ, ব্রাজিলের হয়ে এখন পর্যন্ত অলিম্পিকে স্বর্ণপদক ও একবার কনফেডারেশ কাপ জিতেছেন নেইমার। যার মূল্য ব্রাজিলিয়ানদের কাছে খুবই সামান্য। এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে হলে একটি বিশ্বকাপ যে জিততেই হবে। আর সেটা করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে কাতার বিশ্বকাপে। এমনটাই মানেন তাঁর দীর্ঘদিনের সতীর্থ ও অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা। গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নেইমারের সেরা ফর্ম এবার দেখা যাবে। তাঁকে এতটা ফিট ও প্রাণোচ্ছল আগে কখনোই দেখা যায়নি।

থিয়াগো সিলভা অবশ্য মিথ্যা বলেননি। ২০১৪ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন নেইমার। সেবার দলকে সামনে থেকেও নেতৃত্ব দেন তিনি। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে গুরুতর চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন মূলত সেখানেই শেষ হয়ে যায়। পরে ম্যাচটি জিতে সেমিফাইনালে উঠলেও সেটা ভুলে যেতে চান দেশটির সমর্থকেরা। পরবর্তী সময় ২০১৮ বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি নেইমার। পুরোপুরি ফিটও ছিলেন না। উল্টো ফাউলের শিকার হয়ে অতিরিক্ত ডাইভ দিয়ে সমালোচনার জন্ম দেন। সেসব এখন অতীত।

চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন ব্রাজিলিয়ান নাম্বার টেন। পিএসজির হয়ে গোল করা এবং সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোতে সমানতালে আগাচ্ছেন। এবার জাতীয় দলের হয়ে সেরাটা দেখানোর পালা। নেইমার পারবেন তো ব্রাজিলের হেক্সা জয়ের নায়ক হতে? উত্তরটা সময়ই বলে দেবে। তবে সমর্থকেরা আশা করতেই পারেন।