আম্মার কাছে থাকলে সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকি

সন্তানের কাছে মায়েরা সবকিছুছবি: লেখকের সৌজন্যে
আমার কাছে মনে হয়, জীবনের সবকিছুর সমাধান একমাত্র আম্মার কাছেই পাওয়া যায়। তিনি আছেন বলেই এত নিরাপদে জীবন উপভোগ করতে পারি। আম্মার কাছে থাকলে সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকি।

আমি আগাগোড়াই আম্মার কোলঘেঁষা। পুরোটা সময় তাঁর কাছাকাছি থাকতেই ভালোবাসি। আম্মার ছায়ায় থাকতে ভালো লাগে। তাঁর আশপাশে থাকলে খুব নিরাপদ ও আরাম অনুভব করি। কোথাও বেড়াতে গিয়েও খুব বেশি দিন আম্মাকে ছাড়া থাকতে পারি না। আবার আম্মা আমাকে রেখে কোথাও গেলে, কান্না করতে ইচ্ছা করে।

ইনট্রোভার্ট হওয়ার কারণে মনের অনুভূতি কখনোই কাউকে বলতে বা বোঝাতে পারি না। ভাইদের দিয়ে আম্মাকে বার বার ফোন দেওয়া আর জিজ্ঞেস করতে বলি, তিনি কখন আসবেন। আসল ব্যাপারটা হলো আম্মা ছাড়া আমার ভালো লাগে না। এটাও সত্যি যে আম্মার সঙ্গে পাশাপাশি বসে খুব বেশি গল্প করা হয় না, দরকার ছাড়া কথা বলা হয় না। তবু আম্মাকে আমার আশপাশে থাকতে হবে। উনি আছেন আশপাশে, বসে আছেন, কাজ করছেন, কারও সঙ্গে কথা বলছেন; আম্মাকে চোখের সামনে দেখছি, আমার জন্য এটাই স্বস্তির কারণ।

সবাই বলে, আমি নাকি দেখতেও আম্মার মতোই। এই যে এত বড় হয়েছি, তবু আম্মা ছাড়া আমার এক মুহূর্তও চলে না। ছোটবেলায় অন্য কেউ পানির গ্লাস নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও পানি খেতাম না, যতক্ষণ না আম্মা দিত; এখনো এমনটাই করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বড় হয়েছি যে। আম্মার কাছে বড় হতে ইচ্ছে করে না। তাঁকেই আমার সবকিছু দেখতে হবে, করতে হবে।

এখনো পছন্দ করে জামা কিনতে পারি না। আম্মাকেই পছন্দ করে কিনে দিতে হয়। মুখ ফুটে বলতেও পারি না কোন জামাটা পছন্দ। তিনি এটা বুঝে নিয়ে নিজের পছন্দে কেনেন এবং সেরা জামাটাই আমার জন্য পছন্দ করেন। কোথাও কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে গেলে আম্মা আমার ব্যাগ গুছিয়ে দেন। সত্যি বলতে আম্মা ছাড়া আমি অস্তিত্বহীন। এই যে আমার এত রাগ, এত জেদ—আম্মা ছাড়া কেউই সেটা সহ্য করতে পারে না, কমাতে পারে না।

ছোট্ট একটা ঘটনা বলি, আমি তখন রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করতাম। পিরিয়ড চলাকালীনও নিয়মিত ক্লাসে যেতে হয়। একদিন ক্লাসে গিয়ে প্রচণ্ড পেটব্যথায় কাতরাতে থাকি। মন, মস্তিষ্ক তখন আম্মার কাছে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না। মন বলছিল, আম্মার কাছে গেলেই এই তীব্র যন্ত্রণার অবসান ঘটবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ক্লাস শেষে কোনো কিছু চিন্তা না করে সোজা স্টেশনে চলে যাই; টিকিট না কেটে, ট্রেনের দরজার কাছে গুটিসুটি হয়ে বসে ৫০ টাকা জরিমানা দিয়ে বাড়ি চলে যাই। হোস্টেলের কাউকেই জানাইনি।

আমাকে হুট করে বাড়ি দেখে আম্মা অবাক। পেটব্যথার অবস্থা দেখে তিনি কোনো প্রশ্ন করেননি। হোস্টেল থেকে ফোন আসে বাড়িতে। আম্মা তখন হোস্টেলের আন্টিকে সেই ঘটনা বলে।

আমার কাছে মনে হয়, জীবনের সবকিছুর সমাধান একমাত্র আম্মার কাছেই পাওয়া যায়। তিনি আছেন বলেই এত নিরাপদে জীবন উপভোগ করতে পারি। আম্মার কাছে থাকলে সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকি। আম্মার কোলঘেঁষে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেই মিষ্টি একটা গন্ধে চোখজুড়ে ঘুম নামে, শান্তির ঘুম।

ঈশ্বরদী, পাবনা