সকাল ৯টায় অফিস। এখন বাজে ৮টা ৩৮। ৯টা বাজতে এখনো ২২ মিনিট বাকি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি, আজ অফিসে যাব কি না। আমার অবশ্য এত ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। মন চাইলে যাই, মন না চাইলে নাই। সারা দিন ঘোরাঘুরি করে কাটিয়ে দিই। কারও কাছে কৈফিয়ত দিতে হয় না। অফিসের বস আনোয়ার শাহ কোনো এক বিচিত্র কারণে আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। এত কেন করেন কে জানে!
মাস শেষে যখন বেতন নিতে যাই, ম্যানেজার কামাল উদ্দিন চাকরি নট করে দেন। সরাসরি বলে দেন, ‘ফিরোজ ভাই, আগামী মাস থেকে কষ্ট করে আপনাকে আর আসতে হবে না। বড় স্যার নতুন একজনকে রেখেছেন। সুতরাং আপনি না এলে ভালো হয়।’ কথাগুলো এমনভাবে হেসে বলেন যেন আমার জন্য মস্ত বড় একটা সুসংবাদ অপেক্ষা করছে!
আজ কত তারিখ? টেবিলের ওপর হাতঘড়িটা পড়ে আছে। হাত বাড়ালেই দেখতে পারব। কিন্তু তারিখ দেখতে ইচ্ছা করছে না। এক না দুই? দুই হবে হয়তো।
গত মাসে ম্যানেজার অতিরিক্ত সম্মান দেখিয়ে ক্যানটিনে নিয়ে পরপর দুই কাপ চা খাইয়েছিল। তারপর ঠান্ডা মাথায় সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলল, ‘ফিরোজ ভাই, আপনাকে না অফিসে আসতে নিষেধ করেছি, তাহলে কেন এসেছেন? আর কতবার বলব, আপনার চাকরি নাই।’
আমি মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বললাম, ‘স্যার, আমার ওপর দয়া করুন। আপনি দয়া না করলে আমার চাকরিটা চলে যাবে। আর চাকরি চলে গেলে আমি বউ–পোলাপান নিয়ে পথে বসে যাব। স্যার, দয়া করে আমার সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করবেন না। আমি অসহায় গরিব মানুষ। প্লিজ স্যার। হা হা হা…’
‘ফিরোজ সাহেব, আপনি কিন্তু অতিরিক্ত করছেন। এভাবে হাসবেন না বলে দিলাম। বড় স্যারকে জানাব। আজ যাই।’
‘স্যার, যাই না, বলুন আসি।’
ম্যানেজার সাহেব রাগ করে চলে গেলেন। ম্যানেজার সাহেব কথায় কথায় এত ছ্যাৎ করে ওঠেন কেন? ভদ্রলোকের কি বউয়ের সঙ্গে বনিবনা ঠিকঠাক হয় না? না–ও হতে পারে। বদমেজাজি মানুষদের মেয়েরা পছন্দ করে না।
অফিসে আমার ব্যাপারে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই, শুধু এই কামালউদ্দিনের যত মাথাব্যথা। বেয়ারাকে বললাম, ‘চার পিস মিনি শিঙাড়া দে।’ সে হেলেদুলে শিঙাড়া দিয়ে গেল। আমি এক পিস মুখে পুরে দুই টাকা তাকে বকশিশ দিয়ে চলে এলাম।
শিক্ষার্থী, বাইতুস সালাম অ্যারাবিক ইউনিভার্সিটি উত্তরা, ঢাকা