ফোবিয়া সমাচার

অলংকরণ: শিখা

চারদিকে সুনসান নীরবতা। কক্ষে বসে আছেন। এমন সময় সামনে একটি টিকটিকি বা তেলাপোকা এসে পড়ল। আপনি পড়িমরি দে ছুট। যদিও এ সামান্য তেলাপোকা বা টিকটিকি আপনার কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না এবং সেটা আপনিও জানেন। তবে কেন এ ভয়, কী সেই কারণ, যা আপনাকে ছুটে পালাতে বাধ্য করেছে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ফোবিয়া’।

ফোবিয়া হচ্ছে একধরনের উদ্বেগজনিত মানসিক সমস্যা বা অযৌক্তিক ভয়। এটার পরিমাণ সাধারণ ভয় থেকে কয়েক গুণ বেশি। যখন কারও এ সমস্যা থাকে, সেই ব্যক্তি সক্রিয়ভাবে ফোবিক বস্তু বা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলেন অথবা তাঁরা তীব্র ভয় বা উদ্বেগের সঙ্গে তা সহ্য করেন। ফোবিয়ার কারণে দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে স্ট্রোকও হতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন, ‘ফোবিয়া জন্মগতভাবে কারও থাকে না। কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত ভয় পাওয়ার পেছনে অতীতের ঘটনা থাকে। যে জিনিসকে মানুষ ভয় পায়, তার সঙ্গে অতীতের সেই ঘটনা মিলিয়ে সে একধরনের মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে পড়ে। সেই মানসিক যন্ত্রণা থেকে তৈরি হওয়া আতঙ্ককে আমরা ফোবিয়া বলি। আবার অনেক সময় ফোবিয়া অন্যান্য রোগের উপসর্গও হতে পারে।’

ফোবিয়ার ধরন

সাধারণত চার ধরনের ফোবিয়া দেখা যায়—
> অ্যানিমেল ফোবিয়া: সাপ, বাঘ, ভালুক, মাকড়সা, তেলাপোকা ইত্যাদিতে ভয় পাওয়া।
> ন্যাচারাল এনভায়রনমেন্ট ফোবিয়া: উচ্চতার ভয়, দুর্যোগের ভয়, বজ্রপাতের ভয়, পানির ভয়, বাতাসের ভয় ইত্যাদি।
> সিচুয়েশন ফোবিয়া: বন্ধ ঘরে থাকার ভয়, চুপচাপ থাকার ভয়, বেশি কথা বলার ভয়, কারও সঙ্গে নাচার ভয়, গান গাওয়ার ভয় ইত্যাদি।
> ব্লাড-ইনজেকশন-ইনজুরি ফোবিয়া: রক্তের ভয়, আঘাতের ভয়, অসুস্থ হওয়ার ভয়, সেলাইয়ের ভয়, মেডিকেল ট্রিটমেন্টের ভয় ইত্যাদি।

আবার অনেক ফোবিয়া আছে, যেগুলো এই চার ক্যাটাগরির মধ্যে নেই। কিছু ফোবিয়া আছে, যেগুলো বেশ উদ্ভট ধরনের। মজার বিষয় হলো পৃথিবীতে স্বীকৃত ফোবিয়া প্রায় ৪০০ ধরনের। এখান থেকে বেশ কয়েকটি অপ্রচলিত ফোবিয়ার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো—

বেলোন ফোবিয়া: অসুস্থ হয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন আর সুচের ভয় পাননি, এমন ব্যক্তি পৃথিবীতে কম। ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সূচকে ভয় পান। এমনকি অন্য কাউকে সুচ ফোটাতে দেখলেও তাঁদের হৃৎকম্প বেড়ে যায়।

বিবলিওফোবিয়া: বইপড়ার প্রতি অনীহা এই ফোবিয়ার অন্যতম কারণ। এ ধরনের ভীতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমাজ বা সংস্কৃতির ওপর বইয়ের প্রভাবের আশঙ্কা থেকে হয়। তবে এর সঙ্গে একটি ইতিহাস জুড়ে আছে। ১৯৯৯ সালে বির্কবেক কলেজের প্রফেসর টম শিপলি মধ্যযুগের গ্রন্থভীতি নিয়ে আলোচনা করেন। এতে তিনি বলেন, তৎকালীন সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তি, পাদরি ও গির্জার সহকারীরা ধর্মীয় ও আইনের বইয়ের বিভিন্ন আদেশ দ্বারা সমাজে একটি ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। এ কারণে মানুষের মধ্যে বই নিয়ে একধরনের অনীহা তৈরি হয়।

চেরোফোবিয়া: মান্না দের একটি গান—‘সবাই তো সুখী হতে চায়’। পৃথিবীতে সুখ চায় না এমন কোনো মানুষ নেই। কিন্তু কিছু মানুষ আছে, যাঁরা এ সুখকে স্বীকার করতে ভয় পান। তাঁরা মনে করেন, এ সুখই তাঁদের জীবনে দুঃখের কারণ হয়ে উঠবে। এটাকে বলে চেরোফোবিয়া বা সুখভীতি। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি অতিরিক্ত কাছে আসা থেকে কিছু সুখ পাওয়ার চেয়ে আসন্ন দুঃখ বা হতাশা থেকে দূরে থাকাটাকেই শ্রেয় বলে মনে করেন

গ্যামোফোবিয়া: বিয়ে করতে চান? কিন্তু বিবাহিত জীবন নিয়ে একধরনের ভয় কাজ করছে। যদি এ রকম ভয় আপনার মনে সর্বদা জাগরূক হয়, তবে আপনি গ্যামোফোবিয়ায় ভুগছেন। যাঁদের গ্যামোফোবিয়া হয়, তাঁরা সাধারণত সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ উদাসীন থাকেন। এসব নিয়ে ঐকান্তিক কোনো কথা উঠলে এড়িয়ে যেতে চান। বিবাহসংক্রান্ত যেকোনো আলোচনা তাঁরা অপছন্দ করেন।

নমোফোবিয়া: এতে আক্রান্ত মানুষেরা সেলুলার ফোনের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে পারেন না। ব্রিটেনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫৩ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারী উদ্বিগ্ন থাকেন যখন তাঁদের মুঠোফোন হারায় বা ব্যাটারি শেষ হয়। এমনকি ক্ষণিকের জন্য নেটওয়ার্ক না থাকলে তাঁরা বিষণ্ন, আতঙ্কিত ও নিঃসঙ্গ অনুভব করেন।