ঝুম বৃষ্টি। আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময়। ঘুম থেকে উঠল হাশেম। আজ কাজে যাবে না। অবশ্য গত দু-এক দিন শরীর তেমন ভালো যাচ্ছে না তার। হাশেম পেশায় একজন কৃষক। নিজের ছোট্ট একটা পৈতৃক জমি আছে। ওটাতে চাষ করে খায়। নিজের ছোট্ট একটা বাড়ি আছে।
এমন বৃষ্টির দিনে বের হবে হাশেম। বিলে বৃষ্টি জমে পানিতে যদি দু-একটা মাছ পাওয়া যায়, তাহলে মন্দ কী। যেই ভাবা, সেই কাজ। জালটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বিলের দিকে চলল।
দু-একটা মাছ পেলে অনেক দিন পর মাছ ভাজা খাওয়া যাবে। উদরপূর্তি হবে। বৃষ্টির দিনে মাছ ভাজার সঙ্গে খিচুড়ি। ভাবতেই জিবে জল চলে আসছে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন বিলের ধারে চলে এল, বুঝতেই পারল না।
এখন বৃষ্টি একটু কমেছে। ঝিরঝিরি পড়ছে। বিশাল বড় বিল হাশেমের গ্রামে। হঠাৎ বিলের মাঝখানে কিছু একটা চোখে পড়ল। মনে হচ্ছে পানির নিচ থেকে পানি উঠছে। সাত সকালে চোখে কি ভুল দেখছে হাশেম! আশপাশে কেউ নেই।
চুপি চুপি পানির স্তূপের দিকে এগোল হাশেম। চক্ষু ছানাবড়া! মাঠির নিচ থেকে উঠে আসছে পানি। ছোট গর্ত থেকে আসা পানির ঘূর্ণন তৈরি হয়েছে। অদ্ভুতভাবে পানি ঘুরছে। হাশেমের মাথা ঝিমঝিম করছে। কী হচ্ছে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। হঠাৎ ঘূর্ণির টানে কাদায় পা পিছলে পানির ঘূর্ণিতে হারিয়ে গেল হাশেম।
কিছুক্ষণ পর হাশেম নিজেকে একটা রাজপ্রাসাদে আবিষ্কার করল! অপূর্ব এই রাজপ্রাসাদে আর কেউ নেই। এক পা, দুই পা করে হাঁটতে লাগল। সারা জীবন বেড়ার ঘরে কাটানো হাশেম রাজপ্রাসাদ দেখে বিস্মিত। এক বুক কৌতূহল নিয়ে দেখছে রাজপ্রাসাদের জিনিসগুলো। টেবিলে একটা সুন্দর খাম দেখতে পেল সে। কাঁপাকাঁপা হাতে খুলে ফেলল খামটা। একটা চিঠি।
‘ওহে মেহমান,
হাজার বছরে একবার আসে এমন সম্মান।
এ রাজপ্রাসাদ, আছে যত সম্পদ নিখিলে,
সবি তোমার, নিয়ে নাও, ঘূর্ণি পানিতে ডুবিলে।’
খুশিতে চিঠিটা আরও দু-তিনবার পড়ল হাশেম। একেই বুঝি বলে ভাগ্য।
তারপর হাশেমের আর দুঃখ রইল না। গ্রামে তাকে আর দেখা যায়নি। গ্রামের লোকেরা হাশেমকে দেখতে না পেয়ে কিছুটা চিন্তিত হলো। আহা, এতিম ছেলেটা কোথায় হারিয়ে গেল?
বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম