নদী ও উপত্যকাশোভিত পেহেলগাম

পেহেলগামে হোটেলের সামনে সবাই
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

আমাদের দলনেতার যেন ভ্রমণের রাশি। জীবনে এত ভ্রমণ করেছেন যে অভিজ্ঞতার শেষ নেই। তাঁর কথা হলো, যেকোনো ভ্রমণে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক বিনিয়োগ করতে হয়। আর বিনিয়োগ মানেই ঝুঁকি। ঝুঁকি ছাড়া কোনো অর্জন হয় না। দলনেতা এটা খুব ভালো বোঝেন। পুরো জার্নিতে হিসাববিজ্ঞানের নানা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর কথা হলো, প্রতিটি মুহূর্ত অর্থ দিয়ে কিনতে হয়। ইচ্ছা হলে, ইচ্ছেমতো সবকিছু করা যায় না। যদি অনন্ত সময় ও অর্থ থাকে তাহলে একেকটা জায়গা মনের মতো করে দেখা যায়। তবে এ কথা ঠিক যে তিনি অন্যদের মতো নন। প্রয়োজনে দুহাতে খরচ করেন। এই দলের থাকা, খাওয়া, যাতায়াত সবই রাজকীয়। ডাল লেকের ঐশ্বর্য উপভোগের সময় ছিল এক সন্ধ্যা, এক রাত, এক দুপুর। প্রায় ২০ ঘণ্টা।

এবার গন্তব্য কাশ্মীরের নদী ও উপত্যকাশোভিত আরেক জনপদ। এর নাম পেহেলগাম। ডাল লেক থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে গেলে পেহেলগাম। পথে পথে নানা বৈচিত্র্য। চারপাশের দৃশ্য ভীষণভাবে মুগ্ধ করে। কখনো ফসলের মাঠ, জাফরানখেত, কোথাও আখরোট ও আপেলের বাগান। আবার কখনো পাহাড়ের গা ঘেঁষে ঝরনার সঙ্গে পথচলা। কলকল ধ্বনিতে ঝরনার পানি এমনভাবে বয়ে যায়, যেন তানপুরার এক মায়াবী সুর। দূরে বরফে ঢাকা পর্বতমালা আর সবুজ প্রান্তর। রাস্তার দুপাশে খাবার, ফলমূল, নান্দনিক গহনা ও ঐতিহ্যবাহী শালের দোকান তো আছেই। চলার পথটাও যে কত সুন্দর, সেটা বোঝানো যাবে না।

আরও পড়ুন

নিউ হ্যাভেন
চলতে চলতে গাড়ি থামে এক পাহাড়ের গাঁয়ে। তখন গোধূলি। পেহেলগামে একটু দেরিতে সন্ধ্যা নামে। ছবির মতো সুন্দর পেহেলগাম। পাহাড়, পাইন ট্রি, নদী আর বরফের অপূর্ব গ্রাম। যেন স্বপ্নের তুলি দিয়ে আঁকা উপত্যকা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাত হাজার ফুট উঁচুতে। দূরের নীল আকাশকে মনে হয় ছোঁয়া যাবে। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। চারদিকে রাত নেমে এসেছে।

পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নিউ হ্যাভেন হোটেল। রাস্তা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলে ছোট ল্যান্ডিং। ল্যান্ডিং থেকে গেট দিয়ে হোটেলে ঢুকে দোতলায় আমাদের তিনটা রুম। কথা ছিল দ্রুত শুয়ে পড়া। কিন্তু দলনেতা বললেন, সবকিছু কথামতো হয় না। সত্যি সত্যি হলো না। ঘুমাতে অনেক রাত হলো।

হোটেলের ভেতর লেখকের জন্মদিন পালন
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

সকালে রুমের জানালা খুলতেই এমন এক দৃশ্য দেখা গেল, যা বাস্তবে কেন, স্বপ্নেও কল্পনা করা যায় না। জানালা খুলতেই দেখি রুমের খুব কাছে সাদা বরফে ঢাকা বিশাল উঁচু পাহাড়চূড়া। সকালের মিষ্টি রোদে সেটা এমন অপরূপ লাগছিল যে দলনেতার মতো কঠিন মানুষকেও বিস্মিত করবে। ঘুম থেকে উঠে এমন একটি নান্দনিক দৃশ্য দেখার আনন্দই আলাদা। পরে খেয়াল হলো, আমাদের প্রতিটি রুম থেকেই এমন অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। এখানের হোটেলগুলো এমন পরিকল্পনা থেকেই করা হয়েছে। দলনেতাকে ধন্যবাদ যে তিনি এমন একটি হোটেল ঠিক করেছিলেন।

চলবে…