ঈদ-পার্বণ ঘিরে আমরা সবাই বাড়ি ফিরি। প্রতিবার এই বাড়ি ফেরা ঘিরে তৈরি হয় নানা গল্প। বাস-ট্রেনের ছাদ কিংবা ট্রেনের হাতলে ঝুলেও বাড়ি ফেরে ঘরমুখো মানুষেরা। এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনন্য এক উদ্যোগ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) বন্ধুসভার বন্ধু আসিফ ইকবাল।
পরিবেশদূষণের মহোৎসবে যখন মেতেছে পৃথিবী, এমন সময় সচেতনভাবে পরিবেশের দূষণের সংস্পর্শ এড়িয়ে বাড়ি ফিরেছেন আসিফ। ‘বৃক্ষরোপণ করুন, পৃথিবী বাঁচান’ স্লোগানে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার সাইক্লিং করে তিনি চট্টগ্রামে বাড়িতে ফিরেছেন।
পথিমধ্যে যখনই বিরতি নিয়েছেন, আশপাশে থাকা জনসাধারণকে গাছ লাগানো এবং পরিবেশদূষণ সম্পর্কে সচেতন করেছেন। বিরতিতে নিজের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
১৪ জুন নোবিপ্রবির ভাষাশহীদ আব্দুস সালাম হল থেকে সাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন আসিফ ইকবাল। ক্যাম্পাস থেকে কবিরহাট-বসুরহাট এবং দাগনভুঁইয়া হয়ে মহিপাল, এরপর মহিপাল থেকে চট্টগ্রাম শহর, সবশেষে ফিরেছেন মায়ের কোলে।
নোবিপ্রবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ ইকবাল। ছোটবেলা থেকেই সাইক্লিং করা তাঁর নেশা। আসিফ বলেন, ‘আমরা যদি নিয়মিত সাইকেলে যাতায়াতে অভ্যস্ত হই, তাহলে গাড়ির ব্যবহার কমবে। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি হ্রাস পাবে কার্বন ডাই–অক্সাইডের মতো তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারক গ্যাস।’
নিয়মিত সাইক্লিং করা আসিফের ক্যাম্পাসে আসার পর থেকেই ইচ্ছে ছিল সাইক্লিং করে ক্যাম্পাস থেকে বাড়িতে পৌঁছানোর। অবশেষে এমন সময়ে তিনি তাঁর ইচ্ছে বাস্তবায়ন করেছেন, যখন গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। আসিফ ইকবাল বলেন, ‘জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। তাই এই সময়ে যখন সাইক্লিং করতে যাচ্ছি, তখন আইডিয়াটাও মাথায় আসে। নিজে যেমন পরিবেশদূষণ না করতে চেষ্টা করি, তেমনি মানুষকেও সচেতন করার একটা সুযোগ যখন পেলাম, সেটা আর মিস করলাম না।’
পথিমধ্যে যখনই বিরতি নিয়েছেন, আশপাশে থাকা জনসাধারণকে গাছ লাগানো এবং পরিবেশদূষণ সম্পর্কে সচেতন করেছেন। বিরতিতে নিজের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ছোট কুমিরা পৌঁছে ফেসবুকওয়ালে তিনি লেখেন, ‘কুমিরায় আছি। যে ভয়টা শুরু থেকে পাইসিলাম তাই হলো। পথ বাকি আরও ২০ কিলোমিটার। গাড়ির চাপ বহুগুণে বাড়ছে। আর অন্ধকার রাস্তা, শরীরের জোর ফুরিয়েছে বহু আগেই, মনের জোরে আগাচ্ছি। সামনের ২০ কিলোমিটার পথ হবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং।’
বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়রসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন ফেসবুক কমেন্টেও। তন্ময় পাল লেখেন, ‘গন্তব্যে পৌঁছার পোস্ট দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি।’ ১৩ ঘণ্টা সাইক্লিং শেষে বাড়ি ফেরেন এই বন্ধু।
এমন উদ্যোগকে স্বাধুবাদ জানিয়েছেন নোবিপ্রবি বন্ধুসভার সভাপতি আবু রায়হান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার এই মহৎ বার্তা বহন করে ১৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ সাইকেলে অতিক্রম করা আসিফ ইকবাল দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ও অদম্য মনোবলের পরিচয় দিয়েছে। যা অসাধারণ শারীরিক ও মানসিক শক্তির প্রমাণ। তাঁর এই অর্জন অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। বিশেষ করে যাঁরা পরিবেশ রক্ষার জন্য কাজ করতে আগ্রহী।’
কৃষি নিয়ে স্নাতক পড়া আসিফ ইকবাল স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ কৃষিতে আরও এগিয়ে যাবে। বনায়ন হবে যথেষ্ট, সবুজায়ন হবে লাল-সবুজের সোনার বাংলা। পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হবে প্রত্যেক নাগরিক।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, নোবিপ্রবি বন্ধুসভা