ঈদ আনন্দ

ফাইল ছবি: রয়টার্স

আফজাল মিয়া অনেক দিন ধরেই একটা চিন্তায় ডুবে আছেন—এবার ঈদে কীভাবে ছেলের বায়না মেটাবেন? প্রতিদিন যা উপার্জন করেন, তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চলে। একজন সবজি বিক্রেতা বাবার পক্ষে ছেলের জন্য নতুন জামা কিনতে না পারার দুঃখ সইবার নয়। গরমের কারণে বাজারে সবজির চাহিদা এবার কিছুটা কম, নষ্ট হওয়ার ভয়ে প্রায়ই লাভ না হলে তিনি সবজি বিক্রি করে দেন।

আকাশে ঈদের চাঁদ উঠেছে। একদিকে ঈদগাহে জামায়াতের মাইকিং চলছে, অন্যদিকে শিশু-কিশোররা আতশবাজি ফুটাচ্ছে। চারদিকে উৎসবের আমেজ। কিন্তু আফজাল মিয়ার মনে আনন্দ নেয়। আজকেও অনেক সবজি অবিক্রীত রয়ে গেছে।

সন্ধ্যার আকাশে হালকা গোলাপি আভা মিলিয়ে যাওয়ার পর বাজারে ক্রেতাদের ভিড় কিছুটা বেড়েছে। ক্ষীণ আশা নিয়ে আফজাল মিয়া দোয়া করতে থাকেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সব সবজি বিক্রি হয়ে যায়। আফজাল মিয়া অবিশ্বাস্য চোখে বারবার ভাংতি টাকাগুলো গুনতে থাকে। আজ যথেষ্ট টাকা হয়েছে, দ্রুত সবজি গুটিয়ে বাড়ির দিকে ছুটলেন।
‘বউ, আমার পোলা কই?’
‘বাইরে খেলতাছে, কেন কী হইছে?’
‘ওরে তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো। বাজারে যামু, তুমিও চলো।’
‘কী বলছেন! টেকা কই পাইলেন?’
আফজাল মিয়া হেসে বললেন, ‘আল্লাহ দোয়া কবুল করেছেন। সব সবজি বেইচ্যা দিসি। তাড়াতাড়ি চলো।’

আফজাল মিয়া ছেলেকে কোলে নিয়ে বললেন, ‘চল বাপ বাজারে যাই।’
‘কি মজা, কি মজা। এইবার আমি নতুন জামা পরুম।’
আনন্দে হাততালি দিতে থাকে মেহেদী। ছেলের মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখে আফজাল মিয়ার চোখ ভিজে উঠল। ছেলের জন্য পাঞ্জাবি, পায়জামা, জুতা এবং স্ত্রীর জন্য শাড়ি ও কিছু প্রসাধনী কিনলেন। স্ত্রীর জোরাজুরিতে নিজের জন্য একটা পাঞ্জাবিও কিনে ফেললেন।
আনন্দে লাফিয়ে উঠে বাবাকে জড়িয়ে ধরে মেহেদী বলে, ‘বাপজান, আমার পাঞ্জাবিডা অনেক সুন্দর।’

পাশের দোকান থেকে ভেসে আসছিল ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ…’। গান শুনতে শুনতে আফজাল মিয়ার মনে হলো আজ তার সত্যিকারের ঈদ আনন্দ।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা