সুড়সুড়ি বুড়ি। মাথায় সাদা চুল। গায়ে সাদা শাড়ি। তার ঝুলিতে নানা রঙের পালক। লাল, নীল, সাদা, কালো, সবুজ, হলুদ, কমলা, গোলাপি, বেগুনি। পালক দিয়ে গায়ে সুড়সুড়ি দেয়। আর নানা কাণ্ড ঘটে।
একজন পেটব্যথায় কঁকায়। সুড়সুড়ি বুড়ি তার পেটে হলুদ রঙের পালক বুলিয়ে দেয়। সে কান্না থামিয়ে হাসতে শুরু করে।
একজন রাতে ভূতপ্রেতের স্বপ্ন দেখে। সুড়সুড়ি বুড়ি তার চোখে লাল রঙের পালক বুলিয়ে দেয়। তখন সে শুধু ফুল আর পরির স্বপ্ন দেখে।
এক শিশু প্রতিরাতে বিছানা ভেজায়। সুড়সুড়ি বুড়ি তার মাথায় গোলাপি রঙের পালক বুলিয়ে দেয়। তারপর থেকে সে আর বিছানা ভেজায় না।
পটলার মার বড় যন্ত্রণা। তার সাত বছরের ছেলে সারা দিন টই টই করে মাঠেঘাটে ঘুরে বেড়ায়। লেখাপড়া করে না। স্কুলে যাওয়ার নাম নেই। সে গ্রামের সমবয়সী ছেলেদের মধ্যমণি। খেলাধুলায় সবার সেরা। সবাই তাকে পছন্দ করে। দৌড়ঝাঁপ, সাঁতার, ফড়িং ধরা—সবকিছুতে সবার আগে।
পটলার মা সুড়সুড়ি বুড়ির কাছে যায়। ‘বুড়ি, আমার ছেলেটা লেখাপড়া করে না। স্কুলে যায় না। কিছু একটা কর, যাতে সে লেখাপড়ার মনোযোগী হয়।’
‘ওকে আমার কাছে নিয়ে এসো।’
পটলাকে ধরে আনা হয় সুড়সুড়ি বুড়ির কাছে। বুড়ি ঝুলি থেকে একটা সবুজ পালক বের করে। পটলার গায়ে আলতো করে ছোঁয়ায়। পটলা ফিক ফিক করে হাসে। উহ সুড়সুড়ি লাগে!
মা পটলাকে নিয়ে বাড়ি আসে। পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙতেই সে বই নিয়ে বসে। স্কুলের সময় হলে স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে আবার পড়তে বসে। রাতে খাওয়া ও ঘুমানোর আগ পর্যন্ত শুধুই পড়া।
দিন যায়। পটলার শুধু পড়া আর পড়া। আর কোনো দিকে খেয়াল নেই। আগের মতো হাসে না। ঠিকমতো খায়দায় না। তার শরীর শুকিয়ে যেতে থাকে। তার খেলার সাথিরা সবাই অস্থির। পটলা নেই বলে সবার মন খারাপ। একে অপরের সঙ্গে বলাবলি করে—
পটলা আর খেলতে আসে না কেন?
সুড়সুড়ি বুড়ি তাকে এমন বানিয়ে দিয়েছে।
ছেলেরা সুড়সুড়ি বুড়ির কাছে যায়। বলে, ‘আমরা পটলাকে ফেরত চাই। ওকে ছাড়া খেলাধুলা জমছে না। ওকে আগের মতো বানিয়ে দাও।’
‘আচ্ছা, ওকে আমার কাছে নিয়ে এসো।’
একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে পটলার বন্ধুরা ওকে ধরে নিয়ে যায় বুড়ির কাছে। বুড়ি এবার ঝুলি থেকে একটা নীল পালক বের করে। ওর গায়ে ছোঁয়ায়। পটলা ফিক ফিক করে হাসে। উহ সুড়সুড়ি লাগে!
পরের দিন থেকে পটলা আবার স্কুল বাদ দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠেঘাটে ঘুরতে থাকে। মা আবার চিন্তিত হয়ে পড়ে। বুড়ির কাছে গিয়ে এর সুরাহা চায়। বুড়ি বলে, ‘আচ্ছা ওকে আমার কাছে নিয়ে এসো।’
মা পটলাকে আবার বুড়ির কাছে আনে। কিন্তু পিছে পিছে আসে ছেলের দল। মা বলে, ‘পটলাকে এমন বানিয়ে দাও যাতে সে নিয়মিত পড়াশোনা করে।’
বুড়ি বলে, ‘আচ্ছা!’
ছেলেরা বলে, ‘পটলাকে এমন বানিয়ে দাও যাতে সে নিয়মিত খেলাধুলা করে।’
বুড়ি বলে, ‘আচ্ছা!’
বুড়ি ঝুলির ভেতর থেকে একটা সাদা পালক বের করে। পটলার গায়ে ছোঁয়ায়। পটলা ফিক ফিক করে হাসে। উহ সুড়সুড়ি লাগে!
এরপর থেকে সব ঠিকঠাক। কারও কোনো অভিযোগ নেই। পটলা পড়াশোনাও করে, খেলাধুলাও করে। স্কুলেও যায়, মাঠেঘাটেও যায়। সব কাজে সমান ভালো। মা ও ছেলের দল এখন সবাই খুশি।
প্রফেসর, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি