কোয়ান্টাম প্রতিরোধী ব্লকচেইন নিরাপত্তায় গবেষণা প্রকল্প
ডিজিটাল যুগে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সম্ভাব্য হুমকি বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামোর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি ‘এসপিএইচআইএনসিএস+ ও এনটিআরইউভিত্তিক হাইব্রিড পোস্ট-কোয়ান্টাম ব্লকচেইন নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ নামে একটি গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্যাটির কার্যকর সমাধান উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।
আমার নেতৃত্বে এই প্রকল্প বিটিআরসি ইনোভেশন ফেয়ার ২০২৫-এ জাতীয় পর্যায়ে ফাইনালিস্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
প্রযুক্তিগত গভীরতা ও উদ্ভাবনী দিক
বাংলাদেশের বর্তমান ডিজিটাল সিস্টেমগুলো প্রচলিত ক্রিপ্টোগ্রাফিক অ্যালগরিদম যেমন আরএসএ, ইসিডিএসএ ও এসএইচএ-২৫৬–এর ওপর নির্ভরশীল। তবে শর’স অ্যালগরিদম, গ্রোভার’স অ্যালগরিদমসহ কোয়ান্টাম কম্পিউটারের আগমনে এই অ্যালগরিদমগুলো অকার্যকর হয়ে পড়বে। এই সংকট মোকাবিলায় আমার প্রস্তাবিত হাইব্রিড ব্লকচেইন মডেল দুটি প্রধান উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।
• এসপিএইচআইএনসিএস+: একপ্রকার স্টেটলেস, হ্যাশভিত্তিক ডিজিটাল স্বাক্ষর অ্যালগরিদম, যা কোয়ান্টাম প্রতিরোধী এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা প্রদান করে।
• এনটিআরইউ: একটি ল্যাটিসভিত্তিক পাবলিক কী ক্রিপ্টোসিস্টেম, যা উচ্চগতি ও কম জটিলতায় কার্যকর।
এই মডেল দ্বিস্তরীয় ব্লকচেইন আর্কিটেকচার (পাবলিক ও প্রাইভেট লেয়ার) ব্যবহার করে, যেখানে পাবলিক লেয়ার স্বচ্ছতা ও ডিসেন্ট্রালাইজেশন নিশ্চিত করে এবং প্রাইভেট লেয়ার গোপনীয়তা রক্ষা করে।
একটি কাস্টমাইজড কনসেনসাস প্রটোকল বাস্তবায়ন করে লেনদেনের দ্রুত যাচাই-বাছাই ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া সিমুলেশন ও প্রটোটাইপিংয়ের মাধ্যমে প্রকল্পের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতি বর্তমানে প্রায় ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত দেশি জিডিপিতে অবদান রাখছে, যা দ্রুত বর্ধনশীল। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ কল্পনাপ্রসূত পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য হলো শক্তিশালী ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ ও নিরাপদ সাইবার পরিবেশ নিশ্চিত করা।
গবেষণাটি এই লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন করে এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস)–এর অন্তর্ভুক্ত—
• লক্ষ্যমাত্রা ৯: শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো উন্নয়ন।
• লক্ষ্যমাত্রা ১৬: শান্তি, ন্যায়পরায়ণতা ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান।
• লক্ষ্যমাত্রা ১৭: লক্ষ্য অর্জনের জন্য অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা।
বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো
গবেষণাপত্রে বর্ণিত পদ্ধতি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে প্রয়োগ ও বিস্তৃত সুবিধা প্রদান করতে সক্ষম-
• বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল সিকিউরিটি প্রকল্পসহ সরকারি ডিজিটাল সেবা।
• বিটিআরসি নিয়ন্ত্রিত টেলিকম নেটওয়ার্কে সুরক্ষা প্রদান।
• ডিজিটাল ব্যাংকিং ও ফিনটেক সেক্টরে নিরাপদ লেনদেন।
• স্মার্ট সিটি প্রকল্পে ই-গভর্ন্যান্স সেবা ও নাগরিক সুরক্ষা।
• জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটিং সিস্টেমে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ক্যারিয়ার
একজন সদ্য স্নাতক হিসেবে এই গবেষণাকে পিএইচডি পর্যায়ে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছি। যেখানে এই নিরাপত্তা কাঠামোর ব্যাপক বাস্তবায়ন এবং নতুন ধারণার ওপর গবেষণা চালাব। পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করে এই পদ্ধতির পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতে তরুণদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার লক্ষ্য হলো, দেশের সাইবার নিরাপত্তাকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করে তোলা এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেওয়া।
লেখক: স্নাতক, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।