মানবতা শহর ছেড়ে পালিয়েছে বলে আজকাল অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সত্যিই কি তাই! মানব শব্দের অর্থ মানুষ আর মানবতার অর্থ দাঁড়ায় মানববোধ। এই মানবতা বোধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে যে শব্দটি, সেটি হলো নিঃস্বার্থবোধ। কারণ, যাঁরা বিনিময় প্রথা বাস্তব জীবনে আনেন না, তাঁরাই তো প্রকৃত মানুষ।
দিনকে দিন একটি বিষয় আমাদের সবার সামনে প্রকট হচ্ছে; তা হলো দিবসকেন্দ্রিক মানবিকতা। যেকোনো দিবসে আমরা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ি মানবিক হওয়ার খাতায় নিজেদের নাম লিপিবদ্ধ করার জন্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় মানবিক কাজকর্ম প্রচারে মরিয়া হয়ে পড়ি। কিন্তু এমন মানবিকতা মানববোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
পবিত্র রমজান মুসলিম জাতির জন্য রহমতের মাস। এ মাসে আমরা সবাই দান-সদকা করে থাকি। কিন্তু সেটা কেন অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে করতে হবে? আবার মানবাধিকার দিবসে আমরা পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে মানবাধিকার রক্ষায় মিছিল-সমাবেশ, আলোচনা সভা ও গোলটেবিল বৈঠক করি। সেটা কেন একটি দিবসকে কেন্দ্র করে হতে হবে? ধরা যাক, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীদের অধিকার নিয়ে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার, দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশংসার জোয়ারে ভাসতে থাকে। নারীর অধিকার আদায়ে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ একটি দিবসে না হয়ে প্রতিদিন এ ধারা অব্যাহত রাখা গেলে মানবিকতা বিরাজ করবে।
দিবসকেন্দ্রিক মানবিক হওয়ার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জানান, দিবস করা হয়েছে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। মানুষ যেন বুঝতে পারে দিবসগুলো দ্বারা প্রত্যেক মানুষের নিজ নিজ জায়গা থেকে তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়গুলো। তবে সেটা যেন একটি দিনের আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না থাকে, সেদিকে সবার নজর দেওয়া উচিত। মানুষ হিসেবে নিজেকে দীক্ষিত করতে হবে মানবিক হয়েই।
অনুষ্ঠান আয়োজন করে মানবিকতা প্রদর্শন না করে সারা বছরের জন্য প্রত্যেক মানুষকে মানবিক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো দিবস আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।’
একটি কথা না বললে নয়, মানব শব্দ থেকে মানবতার জন্ম। আর সেই মানব থেকেই ভয়ানকভাবে এই মানবতার মৃত্যু হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাস্তবতা হলো সবাই নবজাগরণের মতো মানবিক, দয়ালু হিসেবে নিজেদের পরিচয় করালেও আদৌ কি তারা মানবিক? এ প্রশ্ন আচমকা আমাদের মনে স্নায়ুযুদ্ধ সৃষ্টি করে।
আমাদের উচিত নিঃস্বার্থভাবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন থেকে একজন অপরজনের পাশে দাঁড়ানো এবং বিশেষ দিবসকেন্দ্রিক মানবিক না হয়ে প্রতিদিনই মানবিকতার পরিচয় দেওয়া। তবে আমরা সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হতে পারব। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারব।
এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন, ইনফো পাওয়ার লিমিটেড