মায়ের জ্যোৎস্না

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

—খোকন, জানালাটা খুলে দিস তো।
প্রবল জ্যোৎস্না যখন ছড়িয়ে পড়ত বাড়িটার চারপাশে, মা তখন বলত! জানালা খুলে দিলেই ঘরে এসে পড়ত আলোকজ্যোৎস্না। ক্লান্ত মা বিছানা থেকে সেই অপরূপ আলোর দিকে তাকিয়ে থাকত। বুকের কোথাও কি থাকত একটু বেদনা, স্তব্ধতায় মোড়া কোনো হাহাকার?

সংসারযুদ্ধ যে কী, শুভর মাকে দেখেই শেখা। তবু সব দীনতার মধ্যেও মা হাসত ফোটা শিউলি ফুলের মতো। কাজের শেষে কখনো নিয়ে আসত মিষ্টি। আর বিভোর হয়ে যেত কবির গানে! তখন শুভ দেখতে পেত, কোথাও নীরব অশ্রুধারা নামছে। গোপন হাহাকারধ্বনি। অনন্তের দিকে চলে যাওয়া গানের কলি। তাকে কেউ বলে দেয়নি কেন, তবু সে বুঝতে পারত মায়ের কষ্টটা কোথায়।

ধীরে ধীরে সে বড় হলো। পড়াশোনা শেষ করে ছোট একটা চাকরি পেল। মায়ের সে কী আনন্দ! কাজ পাওয়ার সেই প্রথম দিনে শুভই মিষ্টি নিয়ে এসেছিল। নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছিল মাকে। মায়ের সে তৃপ্তিতে ছিল গভীর আনন্দ।

সময়ের গতিপথ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সময়। মা একসময় চলে যান জীবন পেরিয়ে। পড়ে আছে আলোকদ্যুতিময় সব স্মৃতিকণা। আর মাঝেমধ্যে কে যেন প্রবল জ্যোৎস্নার রাতে বলে ওঠে, ‘খোকন, জানালাটা খুলে দিস তো।’ আর তখনই নিস্তরঙ্গ ঘরটি জ্যোৎস্নার অপরূপ আলোয় ভরে ওঠে!

শুভ আজকাল নদীতীরে বসে থাকে। সেই কোমল নদী, যেটি মা তাকে প্রথম দেখিয়েছিল! নদীতে ভেসে যাচ্ছিল একটা ডিঙি, আর কে যেন গাইছিল, ‘হে রাত নদী, দুখস্রোতা যদি, বিষাদ রাগিণী রেখো!’
রাতচরা হিমেল জ্যোৎস্না তখন তার মাথার ওপর জেগে ওঠে।

বোয়ালখালী, কধুরখীল, চট্টগ্রাম