অনিন্দ্য স্থাপনাশৈলীর ঐতিহাসিক কড়াপুর মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ

বরিশালের ঐতিহাসিক কড়াপুর মিয়াবাড়ি জামে মসজিদছবি: সংগৃহীত

কড়াপুর মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ। শুধু মনোমুগ্ধকর নান্দনিক ডিজাইনের জন্যই নয়, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবেও মসজিদটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম আকর্ষণ এই মসজিদ ‘বাংলার ভেনিস’খ্যাত বরিশালের সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের কড়াপুর গ্রামে অবস্থিত। মুঘল আমলে নির্মিত বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যেও এটি একটি।

বরিশাল মহানগর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে দ্বিতল ঐতিহাসিক মসজিদটি আঠারো শতকের শেষ দিকে নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা। কিছুটা অস্পষ্ট ইতিহাস এবং স্থানীয় লোকজনের সূত্রে জানা যায়, হায়াত মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি অভিনব ডিজাইনের এই মিয়াবাড়ি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। তৎকালীন ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রিন্স অব ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসিত হন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর উমেদপুরের জমিদারিও কেড়ে নেওয়া হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পর দেশে ফিরে  তিনি এই এলাকায় দুটি দিঘি ও দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল এই মসজিদ নির্মাণ করেন। কথিত আছে তাজমহল নির্মাণকারী কতিপয় কারিগর দিয়ে নির্মাণ করা হয় মসজিদটি!

মসজিদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা প্রাচীন মুঘল আমলে নির্মিত এই মসজিদ দেখতে প্রায়ই ছুটে আসছেন। অনন্য নির্মাণশৈলীর এই মসজিদ লম্বায় প্রায় ৭০ ফুট ও প্রস্থে ৪০ ফুট। কথিত আছে, চুন, সুরকির সঙ্গে মাষকলাই ও চিটাগুড় পচিয়ে এর নির্মাণসামগ্রী তৈরি করা হয়েছিল। এর অন্যতম নির্মাণবৈশিষ্ট্য হলো—ছাদে কোনো ধরনের রড কিংবা লোহার ব্যবহার হয়নি। ইট, সুরকি ও চুনের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি ছাদের পুরুত্ব প্রায় এক ফুট। দোতলা এই মসজিদের নিচতলার দেয়ালের পুরুত্ব ৪০ ইঞ্চি ও দ্বিতীয় তলার দেয়ালের পুরুত্ব ৩০ ইঞ্চি। নান্দনিক কারুকার্যমণ্ডিত মসজিদটির উপরিভাগে তিনটি ছোট আকারের গম্বুজ রয়েছে। মাঝখানের গম্বুজটি অন্য দুটি গম্বুজের চেয়ে আকারে কিছুটা বড়। মসজিদের সামনের দিকে চারটি মিনার এবং পেছনের দিকে চারটি মিনারসহ মোট আটটি বড় মিনার রয়েছে। মুঘল রীতির চারকোনা এই মসজিদের সামনে ও পেছনের দেয়ালের মধ্যবর্তী স্থানে আরও ১২টি ছোট মিনার রয়েছে। মসজিদের উপরিভাগ, গম্বুজ ও সব কটি মিনার ও দেয়ালে নিখুঁত ও অপূর্বসুন্দর কারুকাজ করা, যা দর্শনার্থীদের খুব সহজেই মুগ্ধ করে।

মসজিদ লাগোয়া দিঘির স্বচ্ছ পানিতে মসজিদের বিম্ব যেকোনো মানুষকেই মুগ্ধ করে। মসজিদটির নিচতলায় ছয় দরজাবিশিষ্ট কামরা থাকলেও দ্বিতীয় তলায় আসল সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। এই অংশজুড়ে রয়েছে চমৎকার সব নকশার কাজ। বর্তমানে মসজিদটির দ্বিতীয় তলায় নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় উঠতে বাইরে থেকে দোতলা পর্যন্ত একটি প্রশস্ত সিঁড়ি রয়েছে। আর নিচতলায় রয়েছে ৯টি কক্ষ। এর কয়েকটি কক্ষে বর্তমানে একটি মাদ্রাসার কার্যক্রম চলছে। চোখে পড়ার মতো বিষয় যে সিঁড়ির নিচের ফাঁকা জায়গায় রয়েছে দুটি কবর। এই কবর দুটি কাদের, সেটা আজও জানে না ওই এলাকার মানুষ। মসজিদটির শৈল্পিকতায় মুগ্ধ হতে প্রতিনিয়ত দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য পর্যটক। স্থানীয় লোকজনের দাবি, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হলে দীর্ঘদিন মুগ্ধতা ছড়াবে প্রাচীন এই মসজিদ, যা আমাদের ইতিহাসকেও করবে সমৃদ্ধ।

শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী