এ যেন অপ্রত্যাশিত এক প্রাপ্তি

অতিথি ও আলোচকদের কাছ থেকে ‘সেরা লেখক বন্ধু’ সনদ গ্রহণ করছেন লেখকছবি: তানভীর আহেম্মদ

লেখালেখির শুরু ২০০৪ সালে। বাবা একটা ডায়েরি উপহার দিয়ে বললেন ইচ্ছেমতো লিখতে। ছন্দ বানিয়ে কবিতা, ভালো লাগার ঘটনাগুলো লিখতাম। ২০১৩ সালে গল্প লেখা শুরু করি। বিভিন্ন ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হলে প্রতিটি গল্প পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। সাহিত্যের প্রতিও রয়েছে ভীষণ অনুরাগ। আমার অনুসন্ধিৎসু মন প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখতে চায়।

আমি ভৈরবের সন্তান। মফস্বলের সংস্কৃতির সঙ্গে বেড়ে উঠেছি। ভৈরব বন্ধুসভায় যুক্ত হওয়ার পর থেকে বই পড়ার আসর পাঠচক্র ভালো লাগতে থাকে। প্রতিটি পাঠচক্রে ছিলাম একনিষ্ঠ মনোযোগী শ্রোতা। উপদেষ্টা সুমন ভাই সবাইকে লেখার জন্য তাগিদ দিতেন। এখানে যুক্ত হয়ে লেখালেখি আরও বিস্তৃত হয়। বন্ধুসভার ওয়েবসাইটের জন্য লিখি ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে। আমার প্রথম লেখা ছিল একটা কবিতা। আজ সে লেখাই আমাকে এনে দিল সম্মান। দেশসেরা লেখক বন্ধু নির্বাচিত হয়েছি। কখনো ভাবিনি লেখালেখির জন্য পুরস্কার পাব। স্বপ্ন যেন সত্যি হলো।

১৬ মে বন্ধুসভার ফেসবুক গ্রুপে ‘লেখক বন্ধু উৎসবের’ পোস্টার দেখি। তৎক্ষণাৎ রেজিস্ট্রেশন করে ফেলি। ভৈরব বন্ধুসভার অন্য বন্ধুদেরও রেজিস্ট্রেশন করতে বলি। অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম; সময় যেন কাটে না। যখন উৎসবের আমন্ত্রণপত্র ও মেসেজ পাই, আমার আনন্দ দেখে কে! আমি, প্রিয়াংকা ও মিশু—আমরা তিনজন নির্বাচিত হই ভৈরব থেকে।

২ জুন ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠি। আধা ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে চলে যাই ভৈরব রেলস্টেশনে। সিলেট থেকে ছেড়ে আসা উপবন ট্রেনের ‘ঘ’ বগিতে উঠে পড়ি। ভোর পাঁচটায় ট্রেন রওনা দিল ঢাকার উদ্দেশে। অনেক চেষ্টা করেও টিকিট জোগাড় করতে পারিনি। দাঁড়ানো ভরসা। যাত্রাপথে পরিচয় হয় এক র‍্যাব কর্মকর্তার সঙ্গে। আমরা বন্ধুসভার বন্ধু শুনে তিনি বন্ধুসভার মানবিক কাজগুলো নিয়ে প্রশংসা করলেন। দুই ঘণ্টা পরে ট্রেন পৌঁছাল কমলাপুর রেলস্টেশনে।

বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায় ও সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিকের সঙ্গে লেখক উৎসবে অংশ নেওয়া ভৈরবের বন্ধুরা
ছবি: সংগৃহীত

তখন সকাল সোয়া সাতটা। স্টেশন থেকে বেরিয়ে উবার নিলাম, উদ্দেশ্য কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো অফিস। ঢাকার ব্যস্ত নগরী তখনো পুরোপুরি জেগে ওঠেনি। ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি চলছে, চারপাশে স্নিগ্ধ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ৭টা ৪০ মিনিটে পৌঁছলাম গন্তব্যে। সেখানে পরিচয় হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বন্ধুদের সঙ্গে, জমে ওঠে আড্ডা। সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব। কবিতার ছন্দ, লেখার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক ও কবি সাজ্জাদ শরিফ। পুরো সেশনজুড়ে প্রত্যেক বন্ধুর চোখে ছিল কৌতূহল আর শেখার আগ্রহ। কবিতার কত রূপ, কত ছন্দ। কখনো ঢেউয়ের মতো দোলা দেয়, কখনো স্বাধীনতার আহ্বানে সাহস জোগায়, কখনো আধো রাতে পূর্ণিমা ভরা জোছনায় ভালোবাসতে শেখায়।

‘আজ থেকে আপনাকে পণ করতে হবে আপনি লেখক হবেন। সত্যিকারের লেখক হতে চাইলে লেখালেখিকে ধারণ করতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। আর বেশি বেশি বই পড়তে হবে।’ কথাগুলো বলছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। প্রত্যেক মানুষের চোখে থাকে গল্প। একেকজনের একেকরকম গল্প। সেই গল্প কুড়িয়ে নিতে হবে চারপাশ থেকে। বলছিলেন কবি ও লেখক শাহনাজ মুন্নী। গল্প লেখার কৌশল শেখান তিনি।

কখন যে দুপুর হয়ে গেল টেরই পাইনি। মধ্যাহ্নভোজ শেষে শুরু হয় দ্বিতীয় সেশন। মনোরোগ চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল এবং প্রথম আলোর সাহিত্য সম্পাদক আলতাফ শাহনেওয়াজের কাছ থেকে লেখালেখি সম্পর্কে নতুন অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়। বিশেষ করে ফিচার লেখার নানা কৌশল।

সেরা লেখক বন্ধুদের নাম ঘোষণার সময় হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে আটজন সেরা লেখকের নাম ঘোষণা হয়ে গেছে, ধরেই নিলাম আমি হয়তো তালিকায় নেই। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখনই সঞ্চালক জাফর সাদিক ভাই ঘোষণা দিলেন, এবার পুরস্কার নিতে আসবে ভৈরব থেকে নাহিদ হোসাইন। প্রিয়াংকা, মিশু উল্লাস করে হাততালি দিয়ে ওঠে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন অন্য বন্ধুরাও। আনিসুল হকের হাত থেকে গ্রহণ করলাম ফ্রেমে বাঁধানো সার্টিফিকেট। এ যেন অপ্রত্যাশিত এক প্রাপ্তি।

কখনো কিছু পাওয়ার আশায় লিখিনি, লিখেছি ভালো লাগা থেকে। এবার যেন দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। ‘উদ্দেশ্য যদি সৎ থাকে, লক্ষ্য যদি স্থির হয়, তাহলে সফলতা আসবেই’ কথাটি বারবার কানে বাজছিল। কথাটি আমাদের বলতেন ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা।

উপহারগুলো ব্যাগে রাখার সময় মনে হলো সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি এক ব্যাগ অভিজ্ঞতার ঝুলি। যেখানে ভালোবাসা আছে, শেখার আনন্দ আছে, আছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসমাখা একটি সুন্দর দিন।

সভাপতি, ভৈরব বন্ধুসভা