আমার সাজ

ছবিতে লেখকসংগৃহীত

ঠিক মনে আছে, হালকা কুয়াশায় আবছা শীতের বিকেল। যাচ্ছি নানুর সঙ্গে আত্মীয়ের বাড়িতে। ওখানের মাজারে ওরশ উপলক্ষে দাওয়াত করেছে। মেলাও বসেছে। এই প্রথম আব্বা-আম্মাকে ছাড়া নানুর সঙ্গে কোথাও গেলাম। মেলায় মাটির জিনিসপত্রসহ কত কত কসমেটিকস নিয়ে বসে আছেন ফেরিওয়ালারা।

আসার সময় আব্বা ৫০ টাকা দিয়েছিলেন। ১০ টাকায় নেইলপলিশ আর ৫ টাকায় কাজল এবং ৫ টাকায় বাতাসি রঙের লিপস্টিক কিনেছিলাম। বাতাসি রঙের লিপস্টিকের প্রতি আকর্ষণের কারণ হচ্ছে দেখতে সাদা কিন্তু বাতাসে বাতাসে নাকি রং বেড়ে ঠোঁটকে গোলাপি করে; তাই এর নাম বাতাসি লিপস্টিক। সব সময় আম্মা কিনে দেয় প্রয়োজনীয় সব। এই প্রথম নিজে কিনলাম। সুয়েটারের পকেটে যত্ন করে রেখে দিলাম। বাড়ি ফিরে এতটা যত্নে রেখেছি যে প্রথম ব্যবহারের পর আর করিনি। কারণ, খুব শখ করে কিনেছি। এটা আবার খুব বড় একটি বদঅভ্যেস। এখনো আছে।

আমার সাজ, ছোট কালো টিপ, হালকা লিপস্টিক, চোখে কাজল, হাতে কাচের চুরি আর পায়ে পায়েল। এতেই আমি একদম পরিপাটি। সাজতে ঘণ্টাখানেক লাগে। কারণটা চুল। চুল এত ঘন আর লম্বা ছিল যে আঁচড়াতেই থাকতাম। এই ঝুঁটি বাঁধি, আবার খুলি। সবাই আমার ওপর বিরক্ত হয়ে যেত। কোথাও যাওয়ার সময় বলত, ‘তোর চুল বাঁধা আর হবে না। আমরা যাই, তুই চুল বাঁধ।’ হাসি পায় ওই দিনগুলোর কথা মনে পরলে।

আমি মেকাপ করতে পারি না। যখন শপিংয়ে যাই, টুকিটাকি জিনিস কিনতে কসমেটিকসের দোকানে ঢুকতেই দেখি মেয়েরা কত কিছু কেনে—ফাউন্ডেশন থেকে শুরু করে কত কী! এখন তো নতুন নতুন অনেক জিনিস ব্যবহার করা হয়। নিজেকে কেমন পুরোনা আমলের মনে হয়! কিছুই চিনি না, ব্যবহার করব তো দূরের কথা।

বর্তমান সময়ে যেখানে সবাই আরও স্মার্ট, সুশ্রী হয়ে থাকে; আমি যেন কোথায় আগের আমিটাকেই হারিয়ে ফেলছি। বাইরে গেলে কোনোরকম চুল আঁচড়ে খোপায় কাটা দিয়ে দৌড় দিই। বাতাসে এত দূষণ বেড়েছে যে আমার আগের চুলগুলোও নেই। চারভাগের একভাগ ঝরে গিয়েছে। চোখের কাজল, হাতে কাচের চুরি আর পায়ে পায়েল সবই কি অতীত হয়ে গেল? এখন নিজেকে তৈরি করতে আগের মতো ঘণ্টাখানেক সময় লাগে না, সর্বোচ্চ ৫ মিনিট লাগে।

নিজেকে ফিরে পেতে নিজের মতোই সাজব। এই সাজ হারাতে দেব না।

সভাপতি, ভৈরব বন্ধুসভা