ছাদ টেবিলের খাতা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

‘কবি, একটা প্রশ্ন রাখি?’
‘অবশ্যই রাখবে। তার আগে বলো কবি কেন?’
‘চাদর পরেছ, তাই।’
‘কবিতা বুঝি চাদরে থাকে?’
‘না, তা থাকে না। প্রথম দেখেছি তাই।’
‘প্রশ্ন করো।’
‘আমাকে সিঁদুর পরতে বাধ্য করা হয় কেন?’
‘কে করে?’
‘পুরুষ ও সমাজ’
‘পুরুষ বুঝলাম। সমাজের কথা কেন?’
‘পুরুষই সমাজ।’
‘এটা বোধ হয় ধর্মের আইন।’
‘পুরুষই ধর্ম।’
‘বেশ বললে। পুরুষের কথা না মানলেই পারো।’
‘একদিন না মানার চেষ্টা করেছিলাম। শক্তিতে হেরে গেছি। সেই থেকে যতটুকু না পুরুষকে ঘৃণা করি, তার থেকে ঢের ঈশ্বরে।’
‘তাহলে কি হেরে গেলে?’
‘হেরেছি কি না বলতে পারছি না। তবে জিততে দিইনি তুমুল বিশ্বাস।’
‘তোমার চেনা মহৎ মানুষ কেমন আছে?’
‘রাখো তোমার কেমন থাকা!’
‘কেন?’
‘তারও জিহ্বায় জল আসে। চোখে পঁচিশে স্বভাব। যোনি নিয়ে হাজার গল্প বলে যেতে খুব ইচ্ছে।’
‘ঈশ্বরের আর দোষ কিসে? তুমি কেন উন্মুক্ত করো নিজেকে। জানোই তো ঈশ্বরের দোষ নেই।’
‘তাই তো মহত্ত্বে বিশ্বাস নেই।’

‘একটা কথা কি জানো? আমরা মানুষেরা ভেলকি মেরে থাকি। যদি মনের খবর জানা যেত। মহৎ বলে কেউ থাকত না। ভেলকিতেই মহত্ত্ব। যার ভেলকি ধরা পড়ে, তার মহত্ত্ব হারায়। ভেলকির আরেক নাম পাপ। তুমি কি বলতে পারবে আমার মনে কী চলছে?’
‘না, তা পারব না ঠিক।’
‘যদি সেটা জানতে। ছাদ থেকে ফেলে দিতে।’
‘নিশ্চয়ই সাংঘাতিক কিছু। বলো দেখি কী চলছে কবির মনে?’
‘বলা তো যাবেই না। তাতে যে সাধুত্ব ক্ষয়ে যায়। আর মনের দোষে সরল স্বীকারোক্তিতে মহত্ত্ব হারাতে চাই না। পাপের স্বীকারে সাহস নেই যে।’
‘মনে পাপ সাধু সাজ লাভ কী?’
‘প্রকাশেই-তো পাপ অপ্রকাশে পাপ কিসের?’
‘তার মানে বলতে চাইছ, সাধুর মনেও পাপ থাকে?’
‘সে আর অজানা কই!’
‘তাহলে তার মহত্ত্ব কোথায়?’
‘ভান ধরাতে।’
‘তাহলে বলতে চাইছ, আমার মহৎ ব্যক্তিটি ভান ধরে ছিল?’
‘সাধু যে ভান ভেঙেছে পাপের পাল্লায় পড়ে। আসলে আমরা সবাই ভালোর ভান ধরে আছি। মনের কাছে সবাই পাপী।’
‘তুমি তো দেখি দার্শনিক হয়ে গেলে!’
‘চাদরটা তুমি রাখো।’
‘চাদরটা আমি রাখব কোন হেতুতে?’
‘কবি থেকে দার্শনিক হয়েছি যে।’
‘ফাজলামো রাখো। খুব ঠান্ডা পড়েছে, কফি চলবে?’
‘ভুলেও ওকাজ করতে যেয়ো না।’
‘কেন?’
‘আমার চিন্তায় ভাটা পড়বে।’
‘অনেক রাত হলো যে। পড়শির চোখে ঘুম নেই। চরিত্রে লবণ লাগাতে মনোযোগী বোধ হয়।’
‘চিন্তা কিসের, লবণ লাগবে না। তোমার চল্লিশ আমার পঁচিশ।’
‘তাতে কি। মূর্খের কাছে আর বিবর্তনের জোর কোথায়? আর ভুলে যেয়ো না ইতিহাসে কিন্তু চল্লিশ ও পঁচিশের প্রেম বেশ আছে।’
‘ঠিক আছে, শেষ হোক এক প্রশ্নে।’
‘কী প্রশ্ন?’
‘যা চাই তা আসলেই চাই কি না?’
‘বুঝলাম না!’
‘দরকার নেই বোঝার। অন্যদিন আলাপ হবে তোমার ছাদ টেবিলের খাতায়।’

ডুমুরিয়া, খুলনা