এবার গন্তব্য কাশ্মীরের আরেক বৈচিত্র্যময় জনপদ। এই জনপদের নাম গুলমার্গ। গুলমার্গের এক পৌরাণিক ইতিহাস আছে। পুরাণ কাহিনি মতে, হিমালয়ের কন্যা পার্বতী। পার্বতীর আরেক নাম গৌরী। তিনি কাশ্মীরের এই পথ দিয়ে যেতেন। তাই প্রাচীনকালে এর নাম ছিল গৌরী মার্গ। অর্থাৎ গৌরী দেবী যে পথ দিয়ে যান।
পরবর্তী সময়ে রাজা ইউসুফ শাহ এটির নাম রাখেন গুলমার্গ বা গোলাপের স্থান। শ্রীনগর থেকে এঁকেবেঁকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গেলে এই জনপদ। চলতে চলতে গাড়িচালক শাকিল ভাই জানালেন, গুলমার্গ হলো কাশ্মীরের এক অনিন্দ্যসুন্দর উপত্যকা। এর কিছু দূরেই পাকিস্তান সীমান্ত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯ হাজার ফুট ওপরে। এর রূপের যেন শেষ নেই।
এঁকেবেঁকে সাপের মতো গাড়ি চলছে। একবার বাঁকা রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের ওপরে যাচ্ছে, আবার নেমে আসছে। কখনো কখনো অনেক পথ চলার পরও গাড়ি প্রায় একই জায়গায় থাকছে। পাহাড়ের উপত্যকার ভাঁজে ভাঁজে বরফ জমে আছে। কোথাও কোথাও রাস্তার ওপরও বরফ জমা হয়েছে। অনেক উঁচু পাহাড়ের ঢাল দিয়ে রাস্তা। কোনো রকম দুর্ঘটনা হলে গাড়ি গড়াতে গড়াতে এত নিচু খাদে গিয়ে পড়বে যে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
বরফ–কন্যা
এখানে প্রায় সারা বছর শীত। তারওপর এখন শীতকাল। চারদিকে তীব্র শীত। এ সময় গুলমার্গকে মনে হয় বরফ–কন্যা। শুভ্র বরফ, দৃষ্টিনন্দন পর্বত, উপত্যকা, উদ্যান, পাহাড়চূড়ায় রোদের খেলা, কুয়াশায় ঢাকা স্নিগ্ধ হ্রদ। সবকিছু যেন শিল্পীর আঁকা চিত্রকল্প। সেটা হোক না কোনো রোদেলা দুপুর বা ধূসর কোনো নীরব বিকেল। সব সময় এর এক অকল্পনীয় সৌন্দর্য। এসব ঘিরে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকে দীর্ঘ সবুজ পাইনগাছ। এ এক অন্য রকম জগৎ। যেন কোনো জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় অপরূপ সুন্দর হয়েছে।
একসময় পাহাড়ের কোলে গাড়ি থামল। এখানেই বরফ দেখা যায়। স্থানীয় লোকজন দলনেতাকে জানালেন, লোকাল গাড়িতে আরও কিছুটা দূরে গেলে বিস্তীর্ণ ভূমিতে বরফ জমে থাকতে দেখা যাবে। লোকাল গাড়িতে তিনি সদস্যদের নিয়ে সেখানে গেলেন। সত্যি এখানে বিস্তীর্ণ সমতল জায়গাজুড়ে বরফ জমে আছে। সাদা বরফের ওপর দৌড়াদৌড়ি, গড়াগড়ি, স্কেটিং, স্লেজিং, লাফঝাঁপ, চিৎকার চেঁচামেচি কত কিছু যে করা হচ্ছে এর যেন শেষ নেই। সবাই খুশিতে আত্মহারা।
এখানে বরফের পাহাড় যেন ওপরের দিকে আকাশের সঙ্গে মিশেছে। মনে হবে যেন আকাশ থেকে নেমে আসছে সাদা বরফের নহর। সেই বরফে ঢেকে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ ভূমি। সৃষ্টিকর্তার এমন অপার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখনো চোখে জলও আসতে পারে।
এই টিমের সবার জন্য এমন জায়গায় আসা, এমন দৃশ্য দেখা এই প্রথম। আবার এটাই হয়তো শেষ। এখানে সারা দিন থাকতে ইচ্ছা করে। কিন্তু ওই যে দলনেতা বলেছেন, সব ইচ্ছা পূরণ হয় না। লোকাল গাড়িতে যেখান থেকে এসেছিলাম, আবার সেখানে ফিরে এলাম।
চলবে…