আলোচনাটা উঠেছে করোনা-পরবর্তী সময় থেকে। ওয়ানডে ফরম্যাট বাতিলের পক্ষে কথা বলেছেন বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটার। এর মধ্যে পাকিস্তান কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম অন্যতম। তাঁর মতে, ‘টি-টোয়েন্টি অনেক সহজ এবং বেশি জনপ্রিয়। মাত্র চার ঘণ্টায় খেলা শেষ। অন্যদিকে ওয়ানডে পুরো দিন খেলতে হয়। খেলোয়াড়দের জন্য এটা বেশ ক্লান্তিকর। এ কারণে এই ফরম্যাটটি বাতিল করা উচিত বলেই মনে করি।’
কেবল ওয়াসিম আকরাম নন; ওয়ানডে ক্রিকেটের গুরুত্ব যে হারাতে বসেছে, তা নিয়ে কথা বলেছেন তাঁর স্বদেশি শহীদ আফ্রিদি, ভারতের কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার ও রবি শাস্ত্রী। তবে তাঁরা একেবারে বাতিল করার কথা না বললেও পরামর্শ দিয়েছেন ওভার কমিয়ে আনতে। কেউ কেউ আবার বলেছেন বিশ্বকাপের বছর ছাড়া অন্য সময় দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে যাতে ওয়ানডে না রাখা হয়।
এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন ক্রিকেটের আইন প্রণয়ন, পরিবর্তন-পরিবর্ধন করার দায়িত্ব যে প্রতিষ্ঠানের—সেই এমসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটির নতুন প্রেসিডেন্ট মার্ক নিকোলাস। তাঁর মতে, ওয়ানডে ক্রিকেট কেবল বিশ্বকাপে খেলা উচিত। অন্য সময় ফরম্যাটটি বাতিলের পক্ষে তিনি। সম্প্রতি ইএসপিএনক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্ক নিকোলাস বলেন, ‘আমরা এটা বেশ ভালোভাবেই বিশ্বাস করি যে কেবল বিশ্বকাপেই ওয়ানডে থাকা উচিত। আমরা মনে করি দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে এটির জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অনেক দেশেই গ্যালারি পূরণ হচ্ছে না। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টির জনপ্রিয়তা সবকিছু ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’
ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত ফরম্যাট টেস্ট। এটির মাহাত্ম্য এখনো রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এর পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলেছে। এটি এতটাই জনপ্রিয় যে এখন বিভিন্ন দেশ নিজস্ব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট চালু করছে। অঢেল অর্থের ছড়াছড়ি থাকায় খেলোয়াড়েরাও এসব টুর্নামেন্টে অংশ নিতে অপেক্ষায় থাকেন। এর বাইরে আন্তর্জাতিক ব্যস্ত সূচি তো রয়েছে-ই। সব মিলিয়ে ক্রিকেটারদের এখন সারা বছরই ব্যস্ত থাকতে হয়।
এ বিষয়ে মার্ক নিকোলাস বলেন, ‘টিকিট বিক্রি থেকেও এটা বেশি কিছু। এটা হলো কত সংখ্যক মানুষ নিজস্ব ফ্র্যাঞ্চাইজি চাচ্ছে, কত সংখ্যক দেশ নিজস্ব টুর্নামেন্ট চালু করতে চাচ্ছে এবং কত সংখ্যক খেলোয়াড় বিশ্বজুড়ে এই মার্কেটে থাকতে চায়। এই মুক্তবাজারে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থ জিতে যায়। আর এটাই খেলাটিকে (ওয়ানডে ফরম্যাট) শেষ করে দিচ্ছে।’
এমসিসির নতুন প্রেসিডেন্ট খুব একটা ভুল বলেননি। ক্রিকেটাররা এখন ফরম্যাট বেছে বেছে খেলছেন। কেউ আবার নির্দিষ্ট একটি ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়ে নিচ্ছেন। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতাতে বড় ভূমিকা রাখা বেন স্টোকস। যদিও আসন্ন বিশ্বকাপ খেলতে তিনি আবারও অবসর ভেঙে ফিরেছেন। অবসর ঘোষণার সময় তিনি টানা খেলার ধকলের কথাই তুলে ধরেছিলেন। অনেকে আবার টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলার জন্য অল্প বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিচ্ছেন।
সাবেক খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ক্রিকেটের আইনপ্রণেতারাও এখন এই সত্যটা উপলব্ধি করেন। নিকট ভবিষ্যতে হয়তো দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে ওয়ানডে ফরম্যাট আর না-ও দেখা যেতে পারে। সেই জায়গা পুরোটাই দখল করে নেবে টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট। ওয়ানডে খেলা হবে চার বছর পরপর কেবল বিশ্বকাপে!