অনেক মনে পড়ে বাবা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

প্রিয় বাবা,

আজ খুব করে মনে পড়ছে তোমাকে। তুমি একটু রাত করে বাড়ি ফিরতে বলে মা ভীষণ রাগ করত। বাড়ি ফিরে অতি সাবধানে দরজায় কড়া নাড়তে। আর আমার নাম ধরে ডাকতে। তোমার জন্য রাতে জেগে থাকা আমার জন্য ছিল অনেক আনন্দের। মনে হতো তুমি এসে যদি দেখতে পাও আমি পড়ছি, তুমি খুব খুশি হবে। তোমার হাসিমাখা মুখটা দেখতে ভীষণ ভালো লাগত। শীতের রাতে ঘি দিয়ে ভাত ভেজে যখন মুখে তুলে খাইয়ে দিতে, সেই খাবার অমৃতের মতো লাগত। ডিসেম্বরে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে আমরা যেন হাওয়ায় ভেসে বেড়াতাম। কে পায় আমাদের! একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হতো।

সকালের সোনালি রোদের পরশে উঠানে পাটি পেতে তুমি যখন আমাদের নিয়ে বসে গল্প করতে, মাথার চুল আঁচড়িয়ে দিতে, তেল দিয়ে দিতে, তারপর শীতের পিঠা খেতে খেতে তুমি আমাদের শোনাতে পৃথিবীজয়ী মানুষের গল্প। বলতে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা। কত শত গল্পের বই এনে দিতে ডিসেম্বরের সেই সময়টাতে।

এখনো ডিসেম্বর মাস আসে বাবা। সকালের সূর্যটা ঠিক আগের মতই আলো দেয়। কিন্তু আমাদের দিনগুলো আর আগের মতো আনন্দে কাটে না। জানো বাবা, আজ কতগুলো বছর হয়ে গেল, পায়ে নূপুর পরি না।

তোমার মনে আছে বাবা, আমাদের একবার বর্ষার সময় বিলের মাঝখানে নৌকা ডুবে গেল। পুরো নৌকা বোঝাই করা ছিল তোমার ফিশারির মাছের ফিড। আমাদের সবার মন খুব খারাপ। মা দীর্ঘ সময় ধরে চোখের জল ফেলল। এতগুলো টাকা পানির নিচে চলে গেল। তুমি বাড়ি এলে, আমরা ভেবেছিলাম তোমারও হয়তো মন খারাপ। কিন্তু তুমি এসেই স্বভাবসুলভ গল্প করা শুরু করলে। বললে, যখন নৌকা ডুবে গেল, তখন তুমিও অন্যদের মতো ওপরে শার্টটা রেখে পানিতে নেমেছিলে। ফিরে এসে দেখতে পেলে তোমার শার্টের পকেটে বেশ কিছু টাকা ছিল, সেগুলো নাই। পকেটে আরও একটা জিনিস ছিল, সেটা নেয়নি। খুশি মনে আমার দিকে তাকিয়ে বললে, আমার টাকা চলে গেলে গেছে। আমার মেয়ের নূপুরগুলো যে আছে, এটাই আমার জন্য পরম পাওয়া।

এরকম কত শত স্মৃতিতে তুমি আমাদের জড়িয়ে রেখেছ। এখনো পশ্চিমের আকাশে সূর্য অস্ত যায়। যে হিজল গাছটার ওপর ভর করে তুমি আমাদের সাঁতার শেখাতে, সেই গাছটাও আছে ঠিক আগের জায়গাতেই। হিজলের ফুলগুলো সকালবেলা পুকুরের পানিতে ভেসে বেড়ায় পুরোনো দিনের মতোই। শুধু তুমি নেই বাবা। ভীষণ মিস করি তোমায়। অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে।

ইতি
তোমার রাজকন্যা শিল্পী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া