শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন নিঝুম রাত্রি। পৌষের কনকনে হিমেল হাওয়ায় জড়োসড়ো প্রকৃতির সব প্রাণী। পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। পাখিরাও নীড়ে ফিরে আসছে সন্ধ্যার আগেই প্রিয় ছানাগুলোর কাছে। হিমায়িত রাতের অন্ধকারাচ্ছন্ন শহর, নগর, গ্রামের ব্যস্ত মানুষেরা উষ্ণতায় সন্ধি স্থাপন করে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে চাদর মুড়িয়ে। আলোময় ব্যস্ত শহরের ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলোও জ্বলছে অনবরত রাতভর। প্রকৃতি সেজেছে অপূর্ব সাজে। ঝরাপাতার নৃত্যে গালিচা সেজেছে সবুজের বুকজুড়ে। ঝিরিঝিরি শিশিরের ছোঁয়া পেতে ফুটে আছে পথের ধারে ঘাসফুল। মনোরম পরিবেশে শিথিলতা এনে দেয় মনে সকালের আবহাওয়ায়। গাঁয়ের মেঠো পথে হেঁটে চলে কত পথিক, হলুদ শর্ষের মৃদুমন্দ ঘ্রাণে মাতোয়ারা তার মনপ্রাণ।
শীতের সকালে ঘন কুয়াশায় স্নান করে চুপসে আছে প্রকৃতির সবুজ পল্লব। দূর্বাঘাসে ঝিলিক ছড়াচ্ছে সোনালি মিষ্টি রৌদ্দুর। পৌষপার্বণে কাকডাকা ভোরে শহর আর গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষেরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছুটছে কাজের সন্ধানে। শৈত্যপ্রবাহের আবছা আলোয় ঢেকে আছে নগরীর প্রতিটি প্রান্ত।
শীত এলেই ষোলো আনা বাঙালির মহোৎসব শুরু পিঠাপুলির ধুমধাম আয়োজনে। নতুন ধানের গন্ধে ভরে ওঠে কৃষকের ঘর। নতুন চালের পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত গ্রামের সব বাড়ি। শহরের জীবনেও তার দেখা মেলে। রাস্তার দ্বারে বসে পিঠা তৈরির ব্যাপক ধুম পড়ে যায় বিক্রির জন্য।
শীতের পিঠার সঙ্গে খেজুরের গুড় আর রসের দারুণ সম্পর্ক। চমৎকার মিষ্টতায় ভরপুর রস। বাড়িতে ভাপা, চিতই, পাটিসাপটা, দুধপুলি, মালপোয়াসহ নানা রকম পিঠা তৈরি করেন মায়েরা। তাঁদের কখনো ক্লান্ত হতে দেখিনি। সকালে উনুনের পাশে বসে পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। তাঁরা পরম যত্নে ভালোবেসে পিঠা তৈরি করেন আমাদের জন্য। মায়ের ভালোবাসা জীবনের সর্বত্র জড়িয়ে আছে, সেই শৈশব থেকে কৈশোরে, এভাবেই থাকবে আমৃত্যু।
শীতের সবুজ শাকসবজিগুলো যেন সৃষ্টিকর্তার দেওয়া বড় নেয়ামত। শর্ষে ফুলের গন্ধে মুখর গ্রামাঞ্চলের চারদিক। বাতাসের সুবাসিত ঘ্রাণ প্রাণ কেড়ে নেয়। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ কেবল আমাদের দেশেই দেখা যায়। কনকনে শীতের মৌসুমে প্রকৃতির সতেজতায় চমৎকার লাগে চারপাশের পরিবেশ। অতিথি পাখিরা দল বেঁধে আসে দূরদিগন্ত থেকে, আমাদের খাল, বিল, জলাশয়, হাওর, বাঁওড়, নদীর চারপাশটা মুখর করে তোলে। হিমেল হাওয়া দোলা জাগায় মনে। কবিত্বের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। কবি–সাহিত্যিকেরা হাতের জাদুতে সৃষ্টি করে তোলেন নতুন নতুন শৈল্পিক বুনন। তাঁদের কলমের আঁচড়ে সৃষ্টি হয় কত কবিতা। লেখার ভাষ্যে আর অধিক শব্দতরঙ্গে গড়ে ওঠে অনন্য, সুন্দর শ্রুতিমধুর বাক্যবিন্যাসের নিপুণ সব সাহিত্য।
চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা