পাশে থেকো তুমিও

সম্পর্ক, হাতে হাত রেখে পাশাপাশি চলা, চোখে রাখা চোখ...বদলে যাচ্ছে ধরনফাইল ছবি

জীবনে হয়তো অসম্ভবরকম কিছু ভালো কাজ করেছি; যার পুরস্কারস্বরূপ প্রভার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বিউটি উইথ ব্রেইন কথাটা যদি কারোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে সেটি অবশ্যই প্রভা হবে। বাস্তবিক বুদ্ধিমত্তা ও যৌক্তিক চিন্তাধারাসম্পন্ন একজন মেয়েকে যে কারোর আপন করে পেতে চাওয়াটা স্বাভাবিক। আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না। নিদারুণ আত্মবিশ্বাস আর এক বুক ভালোবাসা নিয়ে আপন করে পেতে চেয়েছি তাঁকে। আমার ডাকে সারা দিয়ে সেও পাশে এসে দাঁড়ায়। আস্থা দিয়ে বলে চিন্তা নেই, আমি তো আছি। পৃথিবীতে ‘আমি আছি’–এর থেকে সুন্দরতম কোনো কথা হতে পারে না।

প্রভার জন্য এক রাতে বায়োলজির সব চিত্র একে ফেলা কিংবা থার্মোডায়নামিক্সে বুধ হয়ে থাকা আমার কাছে কোনো ব্যাপার ছিল না। মেট্রিক্স, ইন্টিগ্রেশন কিংবা ক্যালকুলাস সব বিষয় নিয়ে আলোচনা, বিবেচনা করা যেত। তাঁর সঙ্গে আমার অন্তরীকরণটাও দারুণ মজবুত হয়ে যায়।

সাধারণত যাঁরা মেধাবী হয়, তাঁরা খুব একটা যত্নশীল হয় না। কিন্তু প্রভা ছিল ভয়ংকর রকম যত্নশীল। সব সময় বলত, নিজের ভালো একজন পাগলও বোঝে।

কোভিড ১৯-এর সময় যখন চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল, সে সময়ে সব থেকে বেশি যে মানুষটা পাশে থেকেছে সে প্রভা। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে এত বেশি যত্নশীল ছিল যে একদিন আমার মেজাজ খারাপ ছিল বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অহেতুক কথা বলেছি। সে সব শুনে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। একটু হাসানোর জন্য আমার আর সাকিবের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর গল্পটাও বলে দেয়। সেদিন খিলখিলিয়ে হেসে দিয়েছিলাম।

২০২১ সালের দিকে একদিন প্রভা ম্যাসেজ দিল, আচ্ছা তুমি যা হতে চেয়েছিলে তা কি হচ্ছ? রীতিমত থমকে গিয়েছিলাম সে সময়। আসলেই তো! আমি যেমনটা হতে চেয়েছিলাম, তেমনটা কি আদৌ হচ্ছি? সারাদিন পড়াশোনার সঙ্গেই থাকছি, অথচ নিজের পড়াশোনা সিন্দুক বন্দি করে রেখে দিয়েছি। ততদিনে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। সম্পর্কের জটিলতা দিন দিন বেড়েই চলছিল। আমরা আলাদা হয়ে যাই। এ কেমন আলাদা হওয়া জানা নেই। সেই একই কথা, একই মানুষ, একই আবেগ কিংবা অভিমান। তবু যেন অধিকার নেই।

আলাদা হয়ে থাকা, আর আলাদা হয়ে বাঁচার মধ্যেও প্রভা কখনো আমার থেকে দূরে সরে যায়নি। এতদিনে আমি শিখে গেছি যত্ন নিতে, আগলে রাখতে। প্রতিটা সূত্রের মতই সীমাবদ্ধতা ছিল আমাদের মধ্যেও। এটাকে ঠিক কী বলা যেতে পারে? শুধু বলব পাশে আছি।

তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা