শীতের চাদর

শীতের সকালের লাল সূর্যপ্রতীকী ছবি

ক্লাস পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেলে ছুটকিকে ফুচকা খাওয়ানোর কথা। প্রতিবার কম পেলেও বেচারি এবার সেই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে। বিকেল থেকে আবিরকে ধরেছে ফুচকার দোকানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শেষমেশ তার কাছ থেকে রেহাই না পেয়ে আসতেই হলো বাধ্য হয়ে। সন্ধ্যার পর দুই ভাইবোন মিলে বেরিয়েছে। বাসা থেকে ফুচকার দোকান অনেকটা দূরে। রাস্তার ধারে এই দোকানটাই নাকি সেরা, ক্লাস থ্রিতে পড়া একটা পিচ্চিও সেরা দোকানের খবর জানে। অর্ডারও দিয়েছে সে নিজে, ‘আঙ্কেল ঝাল একটু কম দিয়ে বেশি করে ভর্তা আর টক দেবেন।’ আবির মাথায় হাত দিয়ে নাড়া দিয়ে বলে, ‘তোকে এসব শিখাইছে কে?’ আবির বোনকে বসিয়ে রেখে চা আনতে গেল পাশের দোকান থেকে।

তিথি টের পেল সে রীতিমতো কাঁপছে। জ্বরটা আবার এসেছে। কপালে হাত দিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে চাইল সে। একা একা এসে যে ভুল করেছে ব্যাপারটা, সে ধরতে পেরেছে। কিন্তু কী আর করার! তার ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছিল খুব। সেই লোভ সামলাতে না পেরে এখানে এসে বিপদে পড়া। শীতের কাপড়টাও আনেনি ভুল করে। এর মধ্যেই ফুচকার প্লেটটা তার দিকে এগিয়ে দিল দোকানি। কাঁপা হাতে প্লেটটা নিল। যার জন্য এত দূর আসা, সেটা না খেয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। জবুথবু হয়ে বসে শীতে কাঁপতে কাঁপতে ফুচকা খাচ্ছে সে। আবির কাছাকাছি বসা। সে চা খাচ্ছে আর মেয়েটার কাণ্ড দেখছে। ভালো লাগছে তার কাছে সে দৃশ্যটা।
‘ভাইয়া ওনার ভীষণ জ্বর উঠেছে। গা পুড়ে যাচ্ছে।’
‘তোর পরিচিত কেউ?’
‘না, মাত্রই কথা হলো ওনার সঙ্গে। এই তো সামনেই বাসা।’

আবির উঠে গিয়ে তিথির সামনে দাঁড়াল, ‘কিছু না মনে করলে আমার চাদরটা রাখতে পারেন। আপনি কাঁপছেন রীতিমতো। নেওয়ার জন্য বাসা থেকে কাউকে আসতে বলেছেন?’ তিথি ছুটকির মুখের দিকে তাকাল একবার ‘না না, লাগবে না। আসলে ফোনটা বাসায় রেখে এসেছি, তাই আর কাউকে বলতে পারছি না’। ছুটকি জোর করে হাতে ধরিয়ে দিল চাদরটা। ‘সমস্যা নেই, আমরা এদিক দিয়েই যাব, চাইলে এগিয়ে দিতে পারি’ বলল আবির। খাওয়া শেষ হলে একটা রিকশায় উঠে বসল তিনজনে।

একটু সামনে যেতেই তিথির বাসা চলে এল। সে নেমে গেল। ছুটকিকে বেড়ানোর নিমন্ত্রণও দিল। রিকশা ছেড়ে দিয়েছে ততক্ষণে, তিথির চাদরের কথা মনে পড়ল। ডাক দিয়ে চাদরটা দিতে চাইলে আবির মানা করল। বলল, ফুচকার দোকানে রেখে দিলেই হবে। পরে সে নিয়ে নেবে।

বাসায় আসার পর তিথির কথা মনে পড়ল বেশ কয়েকবার। মেয়েটার ফুচকা খাওয়ার দৃশ্যটা সামনে আসছে বারবার। তবে কি তার প্রেমে পড়ে গিয়েছে? অবশ্য সেটা মনে হয় প্রথম দেখার পরই ঘটেছে। নাহলে এত করে তাকিয়ে সে দেখত না আর নিজের চাদরও কাউকে দেওয়ার মানুষ সে না।

সে কাপড়ের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে। তার কাপড় কেউ গায়ে দিলে সেটা সে আর নিজের গায়ে কখনো দেয় না। একধরনের বাজে অভ্যাসই বলা চলে।

দিন চারেক পর বোনকে নিয়ে আবার ওই দোকানে যায়। এটা যে তিথিকে দেখার আশায়, সেটা না বললেই নয়। কিন্তু সে আসেনি সেদিন। দোকানি মামা চাদরের ব্যাগটা দিল আবিরের হাতে। বোনকে ফুচকা খাইয়ে ব্যাগটা নিয়ে চলে এল। বাসায় ব্যাগ খুলে চাদরের সঙ্গে একটা চিরকুটও পেল, সঙ্গে মুঠোফোন নাম্বারটা দেওয়া। চাদর ঠিকঠাক পেয়েছে কি না, সেটা জানানোর জন্য। আবির কল করে জানাল। সেই সঙ্গে আরও লম্বা হতে থাকল সম্পর্ক, গল্পটা। এরই মধ্যে এক শীতের চাদরের সূত্র ধরে তেত্রিশবার দেখাও হয়ে গেছে তাদের।

সদর, নেত্রকোনা