ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা আর এই সেক্টরে সফল হওয়া—এই দুইয়ের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, চাকরির বদলে ফ্রিল্যান্সিং করলেই স্বাধীন জীবন পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখানে বসের ঝাড়ি না থাকলেও কাজের চাপ, প্রতিযোগিতা ও স্কিল ডেভেলপমেন্টের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। তাই ফ্রিল্যান্সিংয়ে টিকে থাকতে হলে শুরুতেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
নতুন ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত কিছু কমন ভুল করেন, যা তাঁদের ক্যারিয়ার গঠনের পথে বাধা সৃষ্টি করে। চলুন, দেখে নিই সেসব ভুল ও সমাধান—
• স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ না করা: ধরুন, আপনি একটা নতুন শহরে গিয়েছেন। কিন্তু আপনার কাছে কোনো ম্যাপ নেই বা গন্তব্য ঠিক করা হয়নি। কী হবে? পথ হারাবেন, সময় নষ্ট হবে। ফ্রিল্যান্সিংয়েও তা–ই। অনেকে শুধু চাকরির ঝামেলা এড়িয়ে স্বাধীন জীবন যাপন করার স্বপ্নে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। কিন্তু এখানে কী সার্ভিস দেবেন, ক্লায়েন্ট কোথায় পাবেন, কীভাবে নিজেকে দক্ষ করে তুলবেন—এসব না ভেবেই চলে আসেন। ফলে কয়েক মাস পর হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিতে হয়।
• স্কিল ডেভেলপ না করেই কাজ খোঁজার চেষ্টা করা: ফ্রিল্যান্সিং হোক, চাকরি হোক কিংবা ব্যবসা—সব জায়গায় স্কিলই মূল বিষয়। কিন্তু অনেকেই স্কিল ডেভেলপ না করেই কাজ খোঁজা শুরু করেন, যা বড় ভুল। যেকোনো কাজ শিখতে সময় লাগে। তাই আগে নিজের দক্ষতা গড়ে তুলুন, নির্দিষ্ট একটি নিচ (Niche) ঠিক করুন এবং কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করুন। তারপর কাজ খোঁজা শুরু করুন।
• পোর্টফোলিও তৈরি না করা: ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্টরা প্রথমেই আপনার কাজের নমুনা দেখতে চান। ভালো পোর্টফোলিও না থাকলে ক্লায়েন্টরা আপনাকে বিশ্বাস করবেন না এবং আপনাকে কাজ দেবেন না। তাই শুরুতেই নিজের দক্ষতা অনুযায়ী একটি আকর্ষণীয় ও পেশাদার পোর্টফোলিও তৈরি করুন। সেটা হতে পারে ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট, Behance, Dribbble বা Google Drive–এর মাধ্যমে শেয়ারযোগ্য একটি ফোল্ডার।
• সব ধরনের কাজ নেওয়া (ওভার কমিটমেন্ট): নতুনেরা প্রায়ই এমন কাজ নেন, যার সম্পর্কে তাঁদের আগে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে কাজ শেষ করতে পারেন না, ক্লায়েন্ট অসন্তুষ্ট হন, বাজে রিভিউ দেন এবং পরবর্তী সময়ে ভালো প্রজেক্ট পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
তাই যেকোনো কাজ নেওয়ার আগে যাচাই করুন
• আপনি কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারবেন কি না।
• ডেডলাইন ম্যানেজ করা সম্ভব কি না।
• কাজটি আপনার দক্ষতা উন্নত করবে কি না।
প্রথম দিকে কিছু ছোট কাজ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করা ভালো। তারপর বড় ও চ্যালেঞ্জিং কাজ নেওয়া উচিত।
ক্লায়েন্ট খোঁজা না শেখা
অনেকে কাজ শেখার পরও অর্ডার পাচ্ছেন না বলে হতাশ হয়ে যান। আসল বিষয় হলো, কাজ শেখার পাশাপাশি ক্লায়েন্ট হান্টিং বা ক্লায়েন্ট পাওয়ার কৌশলও জানতে হবে।
একটা ভালো স্কিল থাকা মানেই আপনি কাজ পেয়ে যাবেন, ব্যাপারটা এত সহজ নয়। যেমন পড়াশোনা করলেই চাকরি পাওয়া যায় না, আলাদা করে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়। ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে মার্কেটপ্লেসের কাজের ধরন, ক্লায়েন্ট কীভাবে কাজ দেন, কীভাবে প্রোফাইল অপটিমাইজ করতে হয়—এসব শিখতে হবে।
সঠিক উপায়ে ক্লায়েন্ট খোঁজার জন্য নিচের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিন
• Upwork, Fiverr, Freelancer–এর মতো মার্কেটপ্লেসে ভালো প্রোফাইল বানানো।
• কাস্টমারদের চাহিদা বোঝা এবং সঠিকভাবে প্রপোজাল লেখা।
• সোশ্যাল মিডিয়া, লিংকডইন ও নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খোঁজা।
সতর্কবার্তা
শুধু টাকা আয় করার লোভে কোনো কিছু না শিখেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন না। ক্লায়েন্টের বিশ্বাস অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনো ভুল তথ্য দিয়ে কাজ নেবেন না। ধৈর্য হারাবেন না। কারণ, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে সময় লাগে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হলে শুধু শুরু করাই যথেষ্ট নয়; বরং সফল হওয়ার জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশল দরকার। শুরুতেই যদি এসব ভুল এড়িয়ে চলা যায়, তাহলে সফল হওয়ার পথ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
সুতরাং ফ্রিল্যান্সিংয়ে নামার আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, স্কিল ডেভেলপ করুন, ভালো পোর্টফোলিও তৈরি করুন, কাজ বাছাইয়ে সচেতন হোন এবং ক্লায়েন্ট খোঁজা শেখার ওপর গুরুত্ব দিন। তাহলেই আপনি শুধু ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা নয়; বরং সফল ফ্রিল্যান্সারও হতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সার এবং উপদেষ্টা, জয়পুরহাট বন্ধুসভা