তবু বলা হয়নি ভালোবাসি মা

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

সময়টা ২০১৯ সালের মাঝামাঝি। পড়ালেখার সুবাদে বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন বছর তিনেক। সিলেট শহরের এক চিলেকোঠায় শুরু হয় জীবন।

হঠাৎ এক কাকডাকা ভোরে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ি। বিছানা থেকে ওঠার শক্তি নেই। ঘড়িতে ৮টা বেজে ২০ মিনিট। এরপর আর কিছু মনে নেই। ঘণ্টা দুয়েক পর চোখ খুলে দেখি, হাসপাতালের বিছানায়। প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছিলাম। বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী হয়েছে। অনুধাবন করি, বোধহয় কোনো অসুখ হয়েছে। ভাবনাটা মাথায় আসতেই ভীষণ কান্না পায়। সময়ে সময়ে একটি হাতের স্পর্শ খুব বেশি মিস করতে থাকি। যেই নরম হাতের ছোঁয়ায় কতশতবার যে অবলীলায় সুস্থ হয়ে উঠেছি। তিনি জন্মদাত্রী মা। মা নেই কেন আজ? আমার মাকে চাই।

মায়ের কথা ভাবতেই কখন যে চোখ লেগে গেল, ঠাওর করতে পারিনি। আধো ঘুমে হঠাৎ কপালে একটি হাতের স্পর্শ অনুভব করি। অতিপরিচিত একটি হাত। সেকেন্ডের মধ্যেই চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি, মা বালিশের পাশে বসে আছেন। মাকে দেখে ছোট বাচ্চার মতো কান্না করে দিই। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। মা শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে দিচ্ছেন।

এমন এক গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়েছি, যেখানে মাকে জড়িয়ে ধরে ‘ভালোবাসি’ বলার রেওয়াজ নেই। তাই কখনো মাকে বলতে পারিনি, ভীষণ ভালোবাসি মা।

জন্ডিস হয়েছিল আমার। ডাক্তার জানান, কেবিনে ১০-১২ দিন থাকা লাগবে। চাকরির কারণে বাবাকে সেদিনই বাড়িতে ফিরতে হলো। মা থেকে গেলেন। গভীর রাতে প্রস্রাবের চাপে যখন জেগে উঠতাম; দেখতাম, মা আমার পায়ের কাছে বসে আছেন। শরীরে তখন স্যালাইন চলছে। এক হাত দিয়ে মা স্যালাইন ধরতেন, অন্য হাত দিয়ে আমাকে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে যেতেন। ১৫ দিন হাসপাতালের বিছানায় থাকতে হয়েছিল। প্রতিদিন মা আমাকে নিয়ম করে খাইয়ে দিতেন। ভেজা কাপড় দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিতেন, লোশন মেখে দিতেন। আত্মীয় দেখতে আসবে বলে তড়িঘড়ি করে এলোমেলো চুল আঁচড়িয়ে দিতেন। সন্তানের জন্য মায়েরা বোধহয় সবই পারেন।

এমন এক গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়েছি, যেখানে মাকে জড়িয়ে ধরে ‘ভালোবাসি’ বলার রেওয়াজ নেই। তাই কখনো মাকে বলতে পারিনি, ভীষণ ভালোবাসি মা। অন্তত আজ সবাই জানুক, একটি ছেলে তাঁর মাকে আকাশসমান ভালোবাসে।

সহসভাপতি, সিলেট বন্ধুসভা