‘প্রিয় উর্ষা,
অগ্নিদগ্ধ চোখে আর মনের জ্বালাতন নিয়ে তোমাকে লিখতে বসছি। মনে হয় জগতের সবচেয়ে মোটা রশি দিয়ে তোমার মনটা বাঁধা! আগে তো কত মেসেজ দিতে, মাঝেমধ্যে মিসকলড দিতে। কিন্তু এখন তো ফানুসের আগুনের মতো করে তাজিন নামটি জ্বালিয়ে উড়িয়ে দিয়েছ। বেশ! পৃথিবীতে একটা কিছু হারিয়ে গেলে তার চেয়ে ভালো কিছু আসে, তা দুই কর্ণ ভালো করে শোনে আর উড়ন্ত মন বোঝে। কিন্তু তারপরও তোমাকে কেন দুচোখ বারবার খোঁজে? বুঝি না। আমার যে ডিগ্রি অর্জন বুয়েট থেকে, তা দেখে যে কেউ আমাকে পছন্দ করবে। কিন্তু তোমাকে হারানোর ভয়ে মনের ভেতর যে অগ্নিগিরি জ্বলছে, তা মনে হয় প্রশান্ত মহাসাগরের পানি দিয়েও নিভবে না। এই মন শুধু তোমার কাছে যেতে চায়! আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে অসংখ্য রিঅ্যাক্ট আসে। কিন্তু সেসব রিঅ্যাক্ট তোমার একটা রিঅ্যাক্টের কাছে হার মানে! আগে আমি তোমার লাভ রিঅ্যাক্ট পড়ছে কি না খুঁজি। তোমার সেই পছন্দের হলুদ রঙের জন্য সেদিন ব্রাজিল সাপোর্ট করে আমার চক্ষুনদী এখনো বয়ে যাচ্ছে অবিরাম!
মেয়েদের মন নামক শব্দটি কি ইনানী বিচের পাথরের সঙ্গে তুলনা করা যায়! তবে এখন বুঝি যায়! ইনানীর ঝরনার মতো করে আমার দুই নেত্রপল্লব দিয়ে শোকের ছায়া বয়ে যায় আর স্টুন হার্ট তা দেখে আনন্দ পায়। তোমার সেদিনের ওই কাজল চোখ, রঙিন চশমার ফ্রেম, চুলের সিঁথি, শাড়ির কুঁচি, রঙিন আঁচল পরা ছবিটি বাতায়নে টাঙিয়ে রোজ দেখি। ভালোবাসা কি দোষের কিছু! ভালো তো বাসতে পারি! আমার অব্যক্ত কথামালা এক মেঘাচ্ছন্ন বিকেলে দুজন দুইটা ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে বলব। হঠাৎ ঝুমবৃষ্টি শুরু হবে। ঘুড়ি দুটি চোখের অদূরে চলে যাবে আর ঘুড়িতে লেখা থাকবে মায়া শব্দটি। ঝুমবৃষ্টিতে সব রাগ–অভিমান চলে যাবে!
কিন্তু সে কথা বলার সময় দিল না। নিষ্ঠুর সময় তোমাকে নিয়ে গেল ভিনদেশে। বড্ড মিস করি!
ইতি
ভদ্র ছেলে তাজিন।’
চিঠিটি কুড়িয়ে পেয়েছিল আরেক যুগল! ঢাবির কার্জন হলের সায়েন্স ফ্যাকাল্টির। লাল-সবুজের খাম! ওপরে একটা তাজা গোলাপ! চিঠিটি পড়ে মহিনের ভীষণ ভালো লাগল। তুসাকে জিজ্ঞেস করল—
বলো তো ফানুস কেমন করে আকাশে উড়ে?
বাহ! দারুণ প্রশ্ন! আমি তো ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী। এসব প্রশ্ন আমার কাছে পান্তাভাত!
বলো তাহলে।
চাপের সূত্র তুমি জানো। চাপ এবং ক্ষেত্রফল পরস্পর ব্যস্তানুপাতিক। চাপ আর বল পরস্পর সমানুপাতিক। যখন ফানুসের ভেতরে আগুন দেওয়া হয়, তখন এটির আয়তন বেড়ে যায়। ফলে চাপ কমে যায়। চাপ কমলে বাতাসে চাপের চেয়ে ফানুসের চাপ কমে যায়। ফলে ফানুস আগুনের ধোঁয়ায় একটা ঊর্ধ্বমুখী বল অনুভব করে এবং আকাশে ওড়ে।
বেশ দারুণ বলছ তুসা!
উপহারস্বরূপ মাহিন তুষাকে একটা অপরাজিতা ফুল দিল। এবার তুসা মহিনকে প্রশ্ন করল,
বলো তো তুসা মনে আগুন কীভাবে জ্বলে?
কঠিন প্রশ্ন! কাগজে আগুন ধরলে সবাই দেখে কাগজটি জ্বলে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু মনে আগুন ধরলে কেউ দেখে না। এমনকি কয়লা হয়ে পড়ে থাকলেও কারও চোখে পড়ে না। তবে আগুন কীভাবে জ্বলে আমি জানি!
বলো।
আমরা জানি, বাতাসে অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি গ্যাসীয় পদার্থ থাকে। বাতাসে থাকা অক্সিজেন আগুন জ্বালাতে সাহায্য করে আর কার্বন ডাই-অক্সাইড আগুন নেভাতে সাহায্য করে।
বেশ! তাহলে তুমি আমার জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড হয়ে মনের জ্বালাতন নেভাতে আজীবন পাশে থেকো।
তারপর দুজন হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে দোয়েল চত্বরের দিকে চলে গেল।
বন্ধু, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা