নারী
নারীর গতিময়তা
লেখাটি ২০২৪ সালের জুনে প্রকাশিত বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের ‘তারুণ্য’ ম্যাগাজিনের দশম সংখ্যা থেকে নেওয়া।
‘সে যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক’, নারীরা আছিল দাসী।’
নারীদের নিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাবনার সত্যতা আজ প্রস্ফুটিত। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা দেশ, এমনকি বহির্বিশ্বের সব ক্ষেত্রে নারীর সফল পদচারণ আজ লক্ষণীয়।
নারীর ভেতরে সুপ্ত একধরনের শক্তি আছে। এই শক্তি জাগ্রত করার জন্য চাই গতি। এই গতির সঞ্চার করতে হবে নারীর নিজেকেই। আপন মহিমায় অর্থাৎ স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হতে হবে। আমাদের চারপাশের অসংখ্য নারী বিভিন্ন কাজে সফলতার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন।
প্রতিবন্ধকতাই নতুন পথের সৃষ্টি করে—এই বাক্য নারীদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রযোজ্য। যেসব নারীকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি, যাঁদের আদর্শ মানি এবং যাঁরা ইতিহাসে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের চলার পথ ছিল বন্ধুর। আমাদের বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল—কারও চলার পথই মসৃণ ছিল না। বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা নারীদের জীবনী অনুসন্ধান করলে জানা যাবে তাদের বেশির ভাগেরই চলার পথ কতটা কঠিন ছিল। সফলতা সহজে ধরা দেয় না। সেটার জন্য অধ্যবসায় প্রয়োজন, প্রয়োজন শ্রমের। মেধাবী হওয়ার চেয়ে পরিশ্রমী হওয়াটা অনেক বেশি জরুরি। পরিশ্রমই হলো সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর সাঁকো। কেবল মেধার মাপকাঠি দিয়ে জীবনকে যথাযথভাবে যাপন করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো যায় না। তার সঙ্গে নিষ্ঠা ও শ্রম প্রয়োজন। তবে সফল হওয়ার চাইতে জীবনে সার্থক হওয়াটা অতীব জরুরি।
প্রত্যেকের জীবনসংগ্রামের পেছনেই একটা ইতিহাস আছে। তবে সব পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। আজ নারীরা আকাশে বিমান ওড়াচ্ছেন, সমুদ্রে সাবমেরিন ভাসাচ্ছেন, নিরাপত্তায় নারী, দেশ পরিচালনা করছেন নারী। পুরুষের পাশাপাশি নিজেদের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে সর্বত্র আজ নারীদের জয়জয়কার। কন্যা জায়া জননী হিসেবে নারীর সাহচর্য ছাড়া একটি সমাজ বা দেশ সুন্দরভাবে এগোতে পারে না। তাই পরিবারে কন্যাসন্তান জন্মের পর তার সঠিক পরিচর্যা খুব প্রয়োজন। যেন সে চিন্তা- চেতনায় একজন মানবিক, প্রগতিশীল ও শৈল্পিক মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে পারে।
লক্ষ্য ঠিক রেখে সাহসের সঙ্গে দৃঢ়তা ও মনোবল নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সফল নয়, জীবনে সার্থক হওয়ার জন্য কাজ করতে হবে।
প্রতিভা এক বিষয় আর দক্ষতা অন্য বিষয়। কেউ খুব ভালো পড়াশোনা করে আর্কিটেক্ট হলেন, আবার অন্য নারী সাঁতারে বিশ্ব জয় করে এলেন, কেউ ফুটবল, কেউ ভারোত্তোলনে ইতিহাস গড়লেন। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারটা এখন খুব ভালো করছেন। বাংলাদেশ থেকে নারী অ্যাম্পায়ার বিদেশের মাটিতে আম্পায়ারিং করছেন। নানা কিছু রয়েছে নিজেকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করানোর। আমাদের মেয়েরা ফুটবল খেলে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন।
নারীকে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কোনো বাধাকে বাধা না ভেবে নতুন পথের অনুসন্ধান করতে হবে। তাহলে নারীর ভেতরকার শক্তি গতিপ্রাপ্ত হবে এবং সেই গতির গতিময়তায় এগিয়ে যাবে দেশ, এগিয়ে যাবে বিশ্ব।
নির্বাহী সভাপতি (২০২২-২০২৩), বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ