নিউ মোরাল বা নয়া বাস্তবতা
নিউ মোরাল বা নয়া বাস্তবতা হলো নৈতিকতাবিরোধী বিষয়কে সমাজের সর্বস্তরে মেনে নেওয়ার প্রবণতা।
আলো জ্বালালে অন্ধকার দূর হবে; সে এক মহত্ত্বের অন্ধকার হোক, আর মিসরের ফারাওদের পিরামিডে পাঁচ হাজার বছরের জমানো আঁধার হোক। আলো-আঁধারের সম্পর্কের এ বৈপরীত্য আবহমানকালের। একটা সমাজে মানুষের মূল্যবোধ, নৈতিকতাবোধকে আলোর সঙ্গে তুলনার দৃষ্টান্ত মানুষের নিকট বেশ সহজলভ্য। একটা সভ্যতার চূড়ার উচ্চতা কতদূর পৌঁছাবে, তা সে জনপদের মানুষের মধ্যে থাকা নৈতিকতাবোধ থেকে নির্ণয় করা যেতে পারে।
আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের, এগিয়ে যাওয়ার পথে কুসংস্কারের জঞ্জাল বারবার পায়ে আটকেছে। হাল জামানায় শিক্ষা, প্রযুক্তি সচেতনতার অবাধ বিকাশে সে পথ এখন তুলনামূলক মসৃণ। আবার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা এদেশের দেশাচার, সংস্কার ও মূল্যবোধের ক্ষয়—আমাদের এই মসৃণ পথ এতটাই পিচ্ছিল করছে যে এগিয়ে যাওয়ার পথে যে কুসংস্কারের জঞ্জাল আটকাত, সে পথে পা পিচ্ছিলে অতল আঁধারে পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা।
সহজ করে বলি, আমাদের মধ্যে নিউ মোরাল বা নয়া বাস্তবতা বলে একটি শব্দের প্রাসঙ্গিকতা বড় দৃশ্যমান। অর্থাৎ নিউ মোরাল বা নয়া বাস্তবতা হলো নৈতিকতাবিরোধী বিষয়কে সমাজের সর্বস্তরে মেনে নেওয়ার প্রবণতা। যেমন সত্য বলা—মোরাল; মিথ্যা বলা— ইমমোরাল; মানুষ মিথ্যা বলেই, স্বাভাবিক—নিউ মোরাল। দুর্বলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা—মোরাল; দুর্বলকে নির্যাতন করা— ইমমোরাল; দুর্বল হলে একটু নির্যাতিত হতেই হয়—নিউ মোরাল। চাইলে এভাবে বোঝানোর জন্য তালিকা দীর্ঘ করা যেতে পারে। নৈতিকতাবিরোধী ইমমোরাল বিষয়কে সমাজের প্রায় সবার নিকট স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়াই নিউ মোরাল।
আমাদের এই অন্যায়, নৈতিকতাবিরোধী বিষয়গুলোকে সমাজের সব মানুষের গ্রহণ করার প্রবণতা অর্থাৎ নিউ মোরাল বা নয়া বাস্তবতা আঘাত হানবে সমাজের মূলে। বিষয়টি পলিসি মেকারদের অ্যাড্রেস করতে হবে অতি দ্রুতই। বিশেষত ’২৪-এর গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশ সংস্কারের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে মানুষের মধ্যে মৌলিক মানবিক গুণাবলি বিকশিত করতে না পারলে শুধু প্রতিষ্ঠান সংস্কার বা নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে সংস্কার কার্যাবলি টেকসই ভিত্তি পাবে না। উদাহরণস্বরূপ দেখতে পাই, দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থাকলেও কার্যত এই প্রতিষ্ঠানও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল। তাই মৌলিক মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ তৈরি না করতে পারলে আমরা এগিয়ে যেতে তো পারবই না, উল্টো পিছিয়ে যাব বহুগুণ।
মানুষের মধ্যে নৈতিকতাবোধ, মূল্যবোধ না থাকলে শুধু শিক্ষা, দক্ষতা ও প্রযুক্তির সাহায্যে একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠন করা যাবে না। এই চেষ্টা অনেকটা ঘুণে ধরা ভিত্তির ওপর ইমারত তৈরির চেষ্টার মতো। যতবার তৈরি করা হবে, ভেঙে পড়বে হুমড়ি খেয়ে।
বন্ধু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা