‘মেলায় যাই রে’ গানের সুর বাজে এখনো

বৈশাখী মেলায় নাগরদোলায় চড়ে আনন্দে মেতেছে সবাইছবি: এ কে এম ফয়সাল

প্রভাতের আলোয় শুরু নতুন দিনের। সঙ্গে শুরু হলো নতুন বছর, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। বছরের প্রথম দিনটি ঘিরে সারা দেশেই চলে কমবেশি নানা আয়োজন। পয়লা বৈশাখের সঙ্গে হালখাতার প্রচলন শুরু থেকেই। তবে এখন ব্যবসায়ী মহল বছরের নানা সময়েও হালখাতা করে থাকে। কিন্তু বৈশাখে পান্তা–ইলিশ খাওয়া, বৈশাখী মেলার আয়োজন—এসব এখনো পুরোনো হয়নি। গ্রামাঞ্চলে ইলিশের আয়োজন কম থাকলেও মেলার কারণে সেখানেও বৈশাখ জানান দেয় নিজের উপস্থিতি।

ফেলে আসা শৈশবে বৈশাখ মানে ছিল বিকেলে রাস্তা থেকে মেলাফেরত ছেলেমেয়েদের দল বেঁধে বাঁশি বাজানোর হিড়িক। শুধু কি তাই? মাটির তৈজসপত্র, ব্যাংক, প্লাস্টিকের গাড়ি, খেলনা—কত কিছু কিনে ফিরত সবাই! এখনো মাটির ব্যাংকের কথা মনে পড়ে। মেলায় যেতাম বা না যেতাম, বৈশাখে নতুন ব্যাংক কেনা হতো আর তাতে বছরজুড়ে জড়ো করা টাকা একসময় ভেঙে নিজের হিসাবে জমা হতো। ওই সময়ে কেনা একটা ব্যাংক এখনো অক্ষত আছে, যার আকৃতি অনেকটা কাঁঠালের মতো। আরেকটা বিষয় ভোলার নয়। প্লাস্টিকের খেলনা মোবাইল! যাতে বিভিন্ন টিউন সেট করা থাকত; বিশেষ করে ‘মেলায় যাই রে’ বাজানোর মাধ্যমেই যেন ছেলেবেলায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাতাম।

এসব মেলায় বাতাসা, জিলাপি, মুড়িসহ নানা খাবারও পাওয়া যেত। এমনকি আমাদের গ্রামাঞ্চলের মেলায় দেখা যেত মৌসুমি ফলমূল, তরিতরকারি, তাজা মাছ নিয়েও বিক্রেতারা পসরা সাজাতেন।

করোনা মহামারি কাটানোর পর গ্রামগঞ্জে এখনো মেলা আগের মতো জমে ওঠে না। নানা সীমাবদ্ধতায় মেলার আয়োজন গ্রামে অনেকটা কম চোখে পড়ছে এ সময়ে এসে। তবে বৈশাখ উদ্‌যাপনে এই একটি দিন সবাই মেতে থাকে বাঙালিয়ানায়।

কিন্তু বাংলা তারিখের ব্যবহার কম থাকায় বাংলা দিনপঞ্জিকার হিসাব ভুলতে বসেছি আমরা নবীন প্রজন্ম। ব্যবহার কম করায় অনেকের কাছে বাংলা মাসের তারিখ মনে রাখাই কঠিন হয়ে যায়। হুট করে প্রয়োজন হলে চোখ বুলিয়ে নিই দৈনিক পত্রিকার পাতায় কিংবা সহযোগিতা নিই গুগলের। এই নবীন প্রজন্মের মধ্যে বাংলা তারিখ ব্যবহারের গুরুত্ব ব্যাপকভাবে উপলব্ধি করানো জরুরি। শুধু বিশেষ দিনের বাংলা তারিখ না জেনে প্রতিটি দিনের চর্চা হোক প্রচলিত তারিখ গণনার পাশাপাশি বাংলা দিনপঞ্জিকার মতোও।

সবশেষে প্রত্যাশা—পুরোনো সব ভুলে সম্ভাবনায় নতুন উচ্ছ্বাসে শুরু হোক নববর্ষ। সুখ ও সমৃদ্ধিতে কাটুক বাঙালির পুরো বছর।