কেন একা ভ্রমণ আপনার জন্য ভালো

কাশ্মীরছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণ ভালো লাগে না, এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। আবার অনেকের ভ্রমণ ভালো লাগলেও সময় ও সুযোগের অভাবে তাদের সেভাবে কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠে না। কেউ কেউ আছেন সঙ্গীর অভাবে যেতে পারেন না। এমনটা প্রায় সময়ই হয়। দেখা গেল, এ মুহূর্তে দূরে কোথাও কয়েক দিনের জন্য ঘুরে আসতে তীব্রভাবে ইচ্ছা করছে! কিন্তু ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে কাউকেই খুঁজে পাওয়া গেল না। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। ফলে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছাটাও একসময় বাদ দিতে হয়।

এ ক্ষেত্রে একটা সমাধান আছে! কাউকে না খুঁজে, বরং একাই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ুন। আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন উঠতে পারে যে একা গেলে কার সঙ্গে কথা বলব? খাবার টেবিলে সঙ্গী হবে কে? স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তুলে দেবে কে? কিংবা একা দূরে কোথাও যাওয়াটা কি আদৌ নিরাপদ হবে? প্রশ্নগুলো অমূলক নয়। তবে সমাধানও আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, একা ভ্রমণে অনেক সুবিধাও রয়েছে। যেমন এই ভ্রমণে আপনিই একক পরিকল্পনাকারী; কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, কী কী খাবেন, কার সঙ্গে মিশবেন—সবই আপনার ইচ্ছামতো।

একা ভ্রমণের যত সুবিধা

• স্বাধীনতা: একা ভ্রমণে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো স্বাধীনতা। আপনি যদি স্ত্রী, বন্ধুবান্ধব, পরিবার কিংবা অন্য কোনো সঙ্গীর সঙ্গে ভ্রমণে বের হন, তখন যেকোনো কিছু করার ক্ষেত্রে তাদেরও মতামত নিতে হয়। যা অনেক সময় হয়তো আপনার মতের সঙ্গে না-ও মিলতে পারে। কিন্তু একা ভ্রমণে এই ঝামেলা নেই! নিজের স্বাধীনমতো সবকিছু উপভোগ করতে পারবেন।

• আত্মোন্নয়ন: আমরা প্রায় সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময় শুনেছি, ‘যাও এবং নিজেকে আবিষ্কার করো’। কিন্তু সেটা কীভাবে? এর জন্য একা ভ্রমণ হতে পারে সবচেয়ে ভালো পন্থা। নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারবেন।

• রোমাঞ্চকর: একা ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্তই আপনাকে রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেবে। যেমন নিজের ‘কমফোর্ট জোন’থেকে বের হওয়া, নতুন কোনো স্থানে যাওয়া, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। এসব ব্যাপার আপনার মানসিক বিকাশেও অনেক সহায়তা করবে। জীবনকে নতুনভাবে ভাবতে শেখাবে।

• যোগাযোগ দক্ষতা: একা ভ্রমণে আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও মানসিকতার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আর যদি বিদেশে যান, সে ক্ষেত্রে ভিন্ন ভাষায়ও কথা বলতে হবে। এতে করে আপনার যোগাযোগ দক্ষতা যেমন বাড়বে, তেমনি অন্যের মতাদর্শকে সম্মান করার বিষয়টিও নিজের মধ্যে জাগ্রত হবে।

একা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ুন
ছবি: সংগৃহীত

একা ভ্রমণ কি নিরাপদ

বিষয়টি নির্ভর করছে আপনি কোথায় ভ্রমণ করছেন এবং প্রস্তুতি কেমন, তার ওপর। সব সময় এমন স্থান নির্বাচন করুন, যেখানের নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত। বিশেষ করে পর্যটন খাত নিয়ে সুনাম রয়েছে এমন কোথাও। দ্বিতীয়ত, গিয়ে কোথায় থাকবেন, সেটা নির্বাচন করা। এ ক্ষেত্রে হোটেল হতে পারে ভালো মাধ্যম। কিন্তু এতে খরচ বেশি। যদি বাজেট কম থাকে, তাহলে কোনো ট্রাভেল গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতে পারেন। তার আগে ওই গ্রুপটির সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি বিদেশে যান, দেখবেন বিভিন্ন দেশে পর্যটকদের জন্য হোস্টেল রয়েছে। সেখানেও উঠতে পারেন। অনেক হোস্টেলে নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকে।

সব সময় ফোন কিংবা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করা যাবে না। বিশেষ করে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা, যেখানে যাবেন সেই স্থানের একটি ম্যাপ, গুরুত্বপূর্ণ মুঠোফোন নম্বর ইত্যাদি ব্যাগের ভেতর আলাদা কাগজে নোট করে রাখতে হবে, যাতে করে মুঠোফোন হারিয়ে গেলেও আপনি হারিয়ে না যান।

অসুবিধা: সবকিছুর যেমন ভালো দিক আছে, তেমনই অসুবিধাও রয়েছে। একা ভ্রমণে এমনও কিছু মুহূর্ত আসতে পারে, যখন আপনার কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তখন নিজেকে অনেক একাকী মনে হতে পারে। কোথাও কোথাও বাজেটের বাইরেও খরচ হতে পারে। এ জন্য আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।