বাবার ঋণ কীভাবে শোধ করব!

বাবার ঋণ কীভাবে শোধ করব!ছবি: সংগৃহীত

প্রাথমিকে পড়ার সময় একবার স্যার জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমার বাবা কী করেন?’ অস্ফুটস্বরে জবাব দিলাম, আমাদের জন্য হাসি কিনে আনেন। এর বেশি কিছু বলতে পারিনি।

আম্মার মুখে শুনেছি, আমার বাবার কাজ একটাই, আর তা হলো আমাদের জন্য হাসি কিনে আনা। সেদিন থেকে ভাবতে শুরু করলাম, বাবা কীভাবে হাসি কিনে আনেন।

বড় হয়ে বুঝতে পারি, উনি কী কাজ করেন। বাবা প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে বেরিয়ে পড়েন কাজের সন্ধানে। চৈত্র মাসের কাঠফাটা রোদে ঘাম ঝরান। বৃষ্টিতে ভিজে ধান রোপণ করেন। তিনি বৈশাখের তুফান, শ্রাবণের অগ্নিঝরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফসল ফলান।

আমার বাবাকে দেখেছি, তাঁর কোনো বন্ধু নেই। কোথাও ঘুরতেও যান না। প্রতিদিন নিয়ম করে একই কাজ করেন। চাল-ডাল কেনার জন্য নিয়মিত বাজারে যান। রাতে ঘুমাতে গেলে মাঝেমধ্যে চিন্তিত দেখায় তাঁকে।

গত রোজার ঈদের সময় বন্ধু নাবিল এল বাড়িতে। বাবা দাদুর কবর জিয়ারত করে এলেন। তিন বছর আগে কেনা একটা পাঞ্জাবি পরে আছেন, পরনে সাদা লুঙ্গি। লুঙ্গিটি রোজার এক মাস আগে আপু কিনে দিয়েছিল। নাবিল বলল, ‘আঙ্কেল, এই বছর পাঞ্জাবি কেনেননি?’ না শোনার ভান করে বাবা মাথা নিচু করে চলে গেলেন। অথচ উনি আমাদের সবার জন্য নতুন জামাকাপড় কিনে দিয়েছেন। মাঝেমধ্যে ভাবি, বাবার এই ঋণ কীভাবে শোধ করব!

সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ