সম্মোহন

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

নিস্তব্ধ রাত। ঘড়ির কাঁটা দুইটা ছুঁই ছুঁই। অনেক চেষ্টা করেও ঘুম আসছে না রোহান সাহেবের। বালিশের নিচে রাখা ডায়েরিটা নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসলেন তিনি। একটা চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাত পোহালেই একটা সেমিনারে বক্তৃতা দিতে যেতে হবে। বড় সেমিনার। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা থাকবেন সেখানে। ডায়েরিতে চোখ বুলিয়ে বক্তৃতার বিষয়বস্তু আরও একবার ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।

বক্তৃতা ও আবৃত্তিতে দক্ষ হওয়ায় সারা দেশে বেশ পরিচিত রোহান সাহেব। বড় বড় সভা-সেমিনারে ডাক পান। কয়েকটি জাতীয় পুরস্কারও আছে তাঁর প্রাপ্তির ঝুলিতে।
সকাল হতেই হন্তদন্ত হয়ে সেমিনারের দিকে ছুটে চলেন রোহান সাহেব। বাসে ওঠার আগে জীর্ণ বস্ত্র পরিহিত এক বৃদ্ধা পথ আগলে দুই টাকা ভিক্ষা চাইতেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তিনি‌। বৃদ্ধার আর্তনাদে আকাশ ভারী হলেও সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে বাসে উঠে পড়েন। পথ বেশি দূর নয়। তাই একটা লোকাল বাসে উঠলেন। বাস কন্ডাক্টর ভাড়া চাইলে বাঁধে আরেক বিপত্তি। পাঁচ টাকার জন্য বনিবনা হচ্ছিল না কিছুতেই। শেষে রোহান সাহেব মারতে উদ্যত হলে টাকার দাবি ছেড়ে দেয় কন্ডাক্টর।

বাস থেকে নেমে পাশের একটা টংদোকানে চা খেতে বসেন। দোকানের পিচ্চি কর্মচারীটার হাত ফসকে সামান্য একটু চা শার্টে পড়তেই মাথা বিগড়ে যায় রোহান সাহেবের। একটা তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন সেখানে। ঠাস করে চড় বসিয়ে দেন পিচ্চিটার গালে। উপস্থিত সবাই থামাতে চেষ্টা করলে গালাগাল করে চলে যান সেখান থেকে।

সেমিনারের সময় প্রায় হয়ে এসেছে। এবারের সেমিনারের শিরোনাম ‘মানুষ মানুষের জন্য’। রোহান সাহেব বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেবেন। যথাসময়ে সেমিনার শুরু হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা দর্শক সারিতে বসা। রোহান সাহেব স্টেজে উঠেই ‘গাহি সাম্যের গান—/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’ কবি নজরুলের কবিতার দুই লাইন বলে বক্তৃতা শুরু করেন। দর্শকদের করতালিতে মুখর হয় পুরো গ্যালারি।

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়