মরুভূমির মরীচিকা

সাহারা মরুভূমির এই বালিয়াড়ি নাইজারের ফাচি শহরকে ঘিরে রেখেছেপ্রতীকী ছবি: এএফপি

রাত ৩টা ৪৯ মিনিট। আজকাল এ সময়ে নবনী ডায়েরি লিখতে বসে। বারান্দায় গিয়ে রাতের আকাশ আর নিস্তব্ধতাকে সঙ্গী করে আজও সে লিখতে শুরু করল।

মধ্যরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ার এ সমীকরণ মেলাতে পারি না। আবার ঘুম ভাঙলে মধ্যরাতের শহর দেখার প্রতি আগ্রহই–বা কেন, তা–ও বুঝতে পারি না। অবশ্য অনেক কিছু না বোঝাই ভালো। হয়তো দেখা গেল, অতি কৌতূহলে নিদ্রাভঙ্গের কারণ খুঁজতে গিয়ে নিজের ভয়াবহ কোনো এক রোগ আবিষ্কার করলাম। কী দরকার সেসবের! এ পৃথিবীতে বেশ কিছু মানুষ তো দিব্যি বেঁচে আছে দুই চোখের ঘুম এড়িয়ে। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হলো এ ধরনের মানুষেরা ঠিকই বেঁচে আছে, জীবনযাপন করছে। তবে সন্ধ্যা পেরিয়ে মধ্যরাত নামলে, জীবনের অপূর্ণতা আক্ষেপ বোধ হয় তখন তাদের তীব্রভাবে স্মরণ করে। যে স্মরণ উপেক্ষা করার ক্ষমতা তাদের থাকে না। হয়তো তাই সে স্মরণে তারা সাড়া দেয়। আপন করে নেয় দুঃখকে। আমার মনে হয়, যে মানুষ দুঃখকে আপন করে নেয়, পৃথিবীর কোনো কিছুই তাকে আর ছুঁতে পারে না। তখন পৃথিবীকে মনে হয় একটা জনশূন্য দ্বীপ; আর নিজেকে মরুভূমির মরীচিকা।

জনমানবহীন নীরব সে দ্বীপে আমি বহুবার হারিয়েছি। তবে মরীচিকা হয়ে নয়। হারিয়েছি অকারণে, অপ্রয়োজনে। অকারণে একা হারালে ফিরে আসার মায়া থাকে না। থাকে না পিছুটান।

ভাবতে ভাবতেই সূর্যোদয় হলো। আহসান এগিয়ে এসে নবনীর হাত ছুঁয়ে বলল, মরীচিকা হয়ে হারানো পথে আমায় সঙ্গী করে নিয়ো।