চেষ্টার ফসল

অলংকরণ: আরাফাত করিম

ছনের ঘরটি বৃষ্টিতে ভিজে বাতাসের বেগ সহ্য করতে না পেরে কাত হয়ে পড়ে গেল। শোঁ শোঁ শব্দে বাতাস বইছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর বিকট শব্দে বাজ পড়ছে। বাতাসের বেগে গাছের শাখা-প্রশাখা দুলছে, ভেঙে পড়ছে কোনোটা। ভোরের এই ভয়ংকর ঝড় আশপাশের সবাইকে ভীত করে তুলেছে। জীবন বাঁচাতে যে যার মতো ছুটে পালাল। ঝড় থামলে কে কেমন বিপদে আছে তা দেখা যাবে, এখন আপাতত নিজে বাঁচতে হবে।

ভোর শেষে চিরাচরিত নিয়মে সূর্যের আলো এসে পড়ল বিপর্যস্ত গ্রামটিতে। ততক্ষণে সাধারণ মানুষের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে। ঘর ভেঙেছে অনেকের। কারও চাল ওড়ে গেছে। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল মারা গেছে অনেক। ফসলের ক্ষতি হয়েছে খুব। কেউ কেউ আহত হয়েছেন।

ভেঙে যাওয়া ছনের ঘরটির দিকে তাকিয়ে শফিক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পাশেই দাঁড়িয়ে স্ত্রী আসমা। কোলে তিন বছরের ছোট্ট মেয়েটি। মেয়েটি বলছে, ‘আমরা অহন কই থাকুম, আম্মা?’
মেয়ের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল শফিক। জবাব জানা নেই তার। ‘ছোট্ট মেয়েটি খাবে কী? সব যে নষ্ট হয়ে গেল। তাই বলে থাকার জায়গাটুকু পর্যন্ত শেষ হয়ে যাবে এভাবে? কেন? হে দয়াময়, করুণা করো। এভাবে ভাসিয়ে দিয়ো না। তোমার এই বিশ্বজগতে আমরা ক্ষুদ্র কীট। আমাদের দয়া করো।’ মনে মনে বলে সে।

সবাই যখন নিজের ক্ষতি দেখে হতাশায় ভুগছিল, সে সময় শফিক পুনর্গঠনের কাজে নেমে পড়ল। ফসল যতটুকু নষ্ট হয়েছে, তা তো ফিরবে না। যতটুকু বাকি আছে, সেইটুকুই বাঁচাতে হবে।

আসমা শাড়ির আঁচল কোমরে বেঁধে নিল। চোখে দারুণ উদ্যম আর দেহে জয়ীভাব। পেশি যথেষ্ট কঠিন, প্রতি কদমে কেঁপে ওঠে মাটি।
হাতে শাবল নিয়ে এগিয়ে এল শফিক। দড়ি হাতে নিল আর ঝকঝকে দা-টাও। দুজন মিলে মাটি খুঁড়ে গর্ত করার কাজ শুরু করল। একে একে বাঁশের থাম পুঁতে দাঁড় করানো হলো। বেড়াগুলো নতুনভাবে তৈরি করা হলে আগের চেয়ে আরও মজবুত হয়েছে।

বিকেল হতে হতেই সুন্দর ঘরখানা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এসবই তাদের চেষ্টার ফসল। আত্মবিশ্বাস।
আসমা নিজ প্রচেষ্টার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘খোদা, ঘর ভেঙেছ; ভালোবাসা কেড়ে নিয়ো না।’
ছোট্ট মেয়েটি নতুন ঘরটি দেখে আনন্দে অভিভূত হয়ে হাত তালি দিতে লাগল।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা