সন্ধ্যার আলোটা সেদিন যেন একটু বেশিই মায়াবী ছিল।
বৃষ্টি থেমেছে কিছুক্ষণ হলো। আকাশজুড়ে সাদা-ধূসর মেঘের আনাগোনা। রাস্তার ধারে পুরোনো সেই চায়ের দোকানে এককোণে বসে ছিল অভি। হাতে ধোঁয়া ওঠা এককাপ চা, আর মনে একটাই নাম; নিতু।
এই শহরেই একদিন হাত–ধরাধরি করে হেঁটেছিল তারা। পলাশগাছের নিচে দাঁড়িয়ে নিতু বলেছিল, ‘তুই জানিস? আমার সবচেয়ে ভালো লাগে এই সময়টা; বিকেল আর রাতের মাঝখানে ছোট্ট এই মায়াময় সন্ধ্যা।’
অভি কিছু বলেনি। শুধু তাকিয়ে ছিল মেয়েটার মুখের দিকে। নিঃশব্দে মনে মনে ভেবেছিল, এই মুখটাই হয়তো একদিন তার আপন হবে।
কিন্তু তা আর হলো না। একদিন সন্ধ্যায় নিঃশব্দে হারিয়ে গেল নিতু। না কোনো চিঠি, না কোনো খোঁজ, না কোনো অভিযোগ। শুধু থেকে গেল অভূতপূর্ব এক শূন্যতা।
অনেক পরে শোনা গেল, নিতুর বিয়ে হয়েছিল এক দূর শহরে। মেয়েটা কাউকে কিছু না বলেই চলে গিয়েছিল নতুন ঠিকানায়। অভির জন্য রেখে গিয়েছিল শুধু কিছু মৌন মুহূর্ত আর অস্ফুট শব্দ; স্মৃতির মতো।
এখনো সন্ধ্যায় হালকা বৃষ্টি হলে, অভি চুপচাপ চায়ের দোকানে আসে। নিতুর মতো করে কাপটা হাতে ধরে, বাইরে তাকিয়ে থাকে; যেন কোনো অলীক দৃশ্যের প্রতীক্ষায়। কেউ কি সত্যিই পুরোপুরি চলে যায়?
নিতুর নামটা আজও ভেসে আসে বাতাসে। তার হাসি, অভিমানী চোখ, ম্লান মুখশ্রী—সবই যেন অভির স্মৃতিতে জমে আছে কুয়াশার মতো। সেই সব সন্ধ্যা আর ফিরে আসে না। তবু প্রতিদিন সূর্য ডোবার আগে, বাতাসে যেন একটি নাম ছড়িয়ে পড়ে…।