দৌড়ানো যাঁর নেশা

টাটা স্টিল কলকাতা ২৫ কিলোমিটার ইন্টারন্যাশনাল রানিং ম্যারাথনে শাহরিয়ার নাজিম সীমান্তছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মতিঝিল থেকে ফার্মগেটের দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার। চাইলেই এই রুটের যেকোনো বাসে করে চলে আসা যায়। রাস্তায় জ্যাম না থাকলে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগবে। তবে জ্যাম থাকুক বা না থাকুক, কখনোই বাসে ওঠার চেষ্টা করেন না শাহরিয়ার নাজিম সীমান্ত। হেঁটে চলে আসেন। এটাই নাকি তাঁর পছন্দ।

অবশ্য মতিঝিল মাঝেমধ্যে যাওয়া হয়। নটর ডেম কলেজে সীমান্তর ছোট ভাই পড়াশোনা করে। খোঁজখবর নেওয়ার জন্যই সেখানে যাওয়া-আসা। নিজে পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। থাকেন ফার্মগেট। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত নিয়মিত যাতায়াতও হেঁটে করেন। হাঁটলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আবার সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন নিয়মিত দৌড়ান। দূরত্ব কখনো ১৫ কিলোমিটার, কখনো ২০ কিলোমিটার, আবার কখনো কখনো ৩০ কিলোমিটারও হয়ে যায়। জানান, দৌড়ানো তাঁর নেশা। স্বপ্ন দেখেন, বিশ্বের বড় বড় ম্যারাথনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন, লাল-সবুজের পতাকা ওড়াবেন।

টাটা স্টিল কলকাতা ২৫ কিলোমিটার ইন্টারন্যাশনাল রানিং ম্যারাথনে দৌড় শেষ করার পর
ছবি: সংগৃহীত

এর মধ্যেই সেই স্বপ্নের প্রথম ধাপ পূরণ হয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় টাটা স্টিল কলকাতা ২৫ কিলোমিটার ইন্টারন্যাশনাল রানিং ইভেন্ট। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক এই ম্যারাথন এবার অষ্টমবারের মতো আয়োজিত হয়েছে। সেখানে দেশি-বিদেশি প্রায় ১৭ হাজার দৌড়বিদ অংশগ্রহণ করেন। সীমান্তও তাঁদের মধ্যে একজন।

ম্যারাথনে ২৫ কিলোমিটার, ১০ কিলোমিটার, ৪.৫ কিলোমিটার আনন্দ রান, ২.৩ কিলোমিটার সিলভার রান, ২.৩ কিলোমিটার চ্যাম্পিয়নস উইথ ডিজঅ্যাব্যালিটিসহ মোট পাঁচটি ক্যাটাগরি ছিল। ২৫ কিলোমিটার ক্যাটাগরির প্রতিযোগীরা রেড রোড থেকে দৌড় শুরু করে হেস্টিংস জংশন, ইডেন গার্ডেন, পার্ক স্ট্রিট, রবীন্দ্রসরোবর স্টেডিয়াম, ন্যাশনাল লাইব্রেরি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হয়ে রেড রোডে এসে দৌড় শেষ করেন। স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২৫ মিনিটে ম্যারাথন শুরু হয়ে শেষ হয় সকাল ৯টায়।

টাটা স্টিল কলকাতা ২৫ কিলোমিটার ইন্টারন্যাশনাল রানিং ম্যারাথন শেষে বিভিন্ন দেশের অ্যাথলেটদের সঙ্গে
ছবি: সংগৃহীত

পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত আছেন সীমান্ত। মাদকের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার। দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার অর্থবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে। সীমান্ত বলেন, ‘অ্যাথলেটিকসসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা তরুণদের মাদক থেকে দূরে থাকতে ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে সাহায্য করে। একই সঙ্গে মানসিক-শারীরিক শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করে।’

প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেও দারুণ উচ্ছ্বসিত তিনি। শাহরিয়ার নাজিম সীমান্ত বলেন, ‘এ রকম আন্তর্জাতিক ইভেন্টে নিজের বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা সৌভাগ্যের বিষয়। ইচ্ছা আছে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের বড় বড় ম্যারাথনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করব।’

অ্যাথলেট হিসেবে দেশের বিভিন্ন ইভেন্টেও নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন তিনি। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল (ঢাকা ম্যারাথন) হাফ ম্যারাথন, ডিইউআরসি ১০ কিলোমিটার, ইউসিআর হাফ ম্যারাথন, চেজ কাপ্তাই হাফ ম্যারাথন, ১০ কিলোমিটার, হাফ ম্যারাথনসহ (২১.০৯৭ কিলোমিটার) বিভিন্ন ম্যারাথন কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন।